Ads 468x60px

বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

প্রসঙ্গ বিপিএল

আমরা অনুকরণ করতে ভালবাসি। তা সে মন্দ কাজ হোক বা ভাল কাজ। তবে দেখা যায় মন্দ কাজের অনুকরণ বেশি করা হচ্ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রীক বা গোষ্ঠীকেন্দ্রীক, সব নকলই আমরা করে থাকি। বেশ, নকল যখন করছিই তো ভাল করে করি। নকল নিয়ে লেখাবাজি করার কারণ আছে। কারণ একটা ক্রিকেট লীগ। নাম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ। সংক্ষেপে বিপিএল। ফুটবলেও নাকি এমন একটা টুর্নামেন্ট রয়েছে, বাফুফে মিডিয়ার আলো পায়না বলে সেটা আমাদের মত আমজনতার নজরে খুব একটা আসে না। সে যাই হোক, দুটো কেন; দশটা বিপিএল হয়ে খেলাধূলায় আমরা এগিয়ে যেতে পারলে মন্দ কি। তা যে কথা বলছিলাম। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, সেখানে কয়েক বছর আগে আইপিএল নামক একটা পাঁচমিশালী ক্রিকেট লীগ চালু হয়েছে। যাতে চিয়ার্স গার্ল, সিনেমার নায়িকাদের হাফ নেকড শরীরে বিভিন্ন দলকে সাপোর্ট দেয়া এসব যুক্ত করা হয়েছে। পুরোটাই ব্যবসায়িক চিন্তা। মানুষ ক্রিকেট মাঠে ক্রিকেটারদের মাঝে আর বিনোদন পায় না, তার এইসব নর্তকীদের কোমর দুলানো দেখতে হয়। বাহ কি মজা, খেলা দেখতে এসে বিনা পয়সায় কিছু নাচা-নাচি দেখা হলো। আমাদের বোর্ডের কর্তারাও এটা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকবেন, ভারতে দেখাদেখি অনেকেই এমন লীগ আয়োজন করা শুরু করেছে। আমরা না করলে কি হয়? বিভিন্ন চেষ্টার ফসল হলো এই বিপিএল। যার শুরতেই ক্রিকেট মিডিয়ার নিয়ন্ত্রক ভারত তাদের ক্রিকেটারদের দেয়া যাবে না জানিয়ে দিল। কত দেন দরবার, তবুও দাদাদের মন পাওয়া গেল না। তাতে কি, ক্রিকেটারদের পাওয়া যায়নি নায়িকাদের তো পাওয়া যাবে। ওদেরকে তো আর বিসিসিআই নিয়ন্ত্রণ করে না। টাকা ছড়ালে তারা এসে নেচে দিবে। তাই হলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাচতে এল ভারতের কিছু অভিনেত্রী, আইটেম গার্ল। তাদের টাকার বিনিময়ে নৃত্য কর্মসূচী দেখে আমাদের চোখ হৃদয় জুড়িয়ে গেল। বাংলাদেশী টুর্নামেন্টে হিন্দী গান শুনে আমরা অতিশয় আনন্দ লাভ করলাম, আর বিশ্বকে বার্তা দিলাম আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি বলতে হিন্দী নাচ-গান ছাড়া তেমন কিছু নেই। বড় আশা ছিল বিপিএলে দেখব বাংলাদেশের কিছু তরুণের ব্যাট বলের নৈপুণ্য। সে আশায় গুড়ে বালি। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের হুঙ্কারে দেশের ছেলেগুলো চুপষে থাকলো। সাথে ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জের একদল উইলোবাজ শাসন করে চললো দেশীয় বোলারদের। কি লাভ হলো শেষ পর্যন্ত ? বিদেশীদের ভারে দেশীয় ক্রিকোটাররা হা পিত্যেশ করে মরছে কখন সে ব্যাট করতে নামবে। সুযোগ আর হয় না, যখন হয় তখন নিজেকে প্রমাণের কিছু থাকে না। রান বাড়ানোর চাপে উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসতে হয়। ডেথ ওভারে বোলিং এর সুযোগটাও হয়ে ওঠে না। তাহলে অভিজ্ঞতা বাড়ছে কিভাবে? দাদাদের আইপিএলে দেশের ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ হয় না, দেশীয় লীগেও যদি এমন হয় তবে শুধু ব্যবসায়িক ভাবনায় এমন লীগ আয়োজন করা কেন? খেলাটা টি২০, এটায় ভাল করলে খুব একটা নাম নেই যতটা হয় টেস্ট ক্রিকেটে ভাল করলে। সেজন্য চেষ্টা করছি কি আমরা ? দেশের প্রথম শ্রেণীর লীগটাকে পিকনিক টুর্নামেন্ট না বানিয়ে ব্যবসায়িদের সম্পৃক্ত করে বিপিএলের মত করলে কি খুব ক্ষতি হয়? আফসোস, আমরা খেলাধূলাতেও লাভ-ক্ষতির হিসাব কষি। দেশের সম্মানের কথা ভাবনায় আসে না। নকল যখন করতেই হবে, দাদাদের প্রথম শ্রেণীর লীগটাকে করি। আমাদের সাথে তাদের পরিবেশ মিলে যায়, অস্ট্রেলিয়ার নয়। অস্ট্রেলিয়ার মডেল নিয়ে পড়ে থাকা মানে কিছু না করা, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট কাঠামোটাও যদি নকল করতাম তাহলে টেস্ট ক্রিকেটে এত পিছিয়ে থাকতে হতো না। এমন ভুরি ভুরি লেখা পত্রিকার পাতায়, ব্লগে এসেছে। কর্তাদের চোখে কখনোই এসব পড়ে না। তারা ভাবে ব্যবসা, আইপিএলের আদলে নাম দিতে হবে বিগ ব্যাশের মত নয়। আর আমজনতার (দর্শকের) আনন্দ, বেদনা হাওয়ায় মিলিয়ে যায় অর্থের টানে। তাদের জন্য ভাবার সময় কারো হয় না।

Like us on Facebook