Ads 468x60px

সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ: যেমন দেখলাম

এশিয়া কাপের শুরুটা ভালই করলো বাংলাদেশ। যেভাবে চেয়েছিলাম, মানে জয় দিয়ে তা না হোক অন্তত কিছু সমালোচনার জবাব দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারাটা সামর্থ্যের পরিচায়ক। বেশ কিছুদিন ধরে ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছিল। যারা বর্তমানে খেলছেন তাদের তো কথা বললেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কটূ কথা শুনতে হয়। আর যারা সাবেক তাদের বিরুদ্ধে কৌশলে লেগে আছেন বিসিবির কতিপয় সুযোগ সন্ধানী কর্মকর্তা। যাদের অতীত বলে তারা কেউ ছিলেন ফুটবলার, কেউবা স্রেফ সংগঠক। তারাই অপকৌশল খাটিয়ে বিসিবির কাউন্সিলরদের তালিকা হতে সাবেক ক্রিকেটারদের বাদ দেয়ার আইন প্রায় পাশ করে ফেলেছেন। প্রায় কারন ক্রীড়া পরিষদ এখনো হ্যাঁ বা না কিছু বলেনি। তাই ক্ষীণ একটা আশা এখনো বিদ্যমান। কে বলতে পারে এ যাত্রায় বেঁচে গেলে পরে নতুন কৌশল খাটাবেনা অক্রিকেটার কর্তারা। এত গেল একটা সমস্যা। কিন্তু আরেকটি সমস্যা যে একেবারে জাতীয় দলের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বর্তমান বিসিবির (লোটাস কামালের বিসিবি) জন্য নতুন নয়। সভাপতির নাতির অপছন্দে আশরাফুল দলে স্থান পায় না এটা অনেকে জেনে গেছেন। আবার তামিমকেও তার অপছন্দ। তাই তো ১৫ জনের তালিকায় তার নাম দেখে কেটে দিতে দ্বিধা হয়নি। ফল স্বরূপ চাচা প্রধান নির্বাচক আকরামের বিদ্রোহ এবং পদত্যাগ। বিষয়টা মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়াল। তিনি আকরামকে বুঝালেন ভবিষ্যতে লোটাস সাহেব এমন করবেন না। আকরাম যেন ফিরে আসে। কাকতালীয়ভাবে কামালকে বুঝিয়ে তামিমকে ঢোকানোর ব্যবস্থা করলেন বিসিবিতে কর্মরত সাবেক এক ক্রিকেটার। ফুটবলের মাঠ থেকে উঠে আসা কেউ কামালকে বিষয়টা বুঝালেন না! তামিমও ঢুকলো আকরামও এলেন। অনেকে এতে পক্ষপাতের গন্ধ খুঁজতে পারেন। হয়তো কেউ পেয়েও গেছেন। তাতে যদি বিসিবির বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হয় তবে এমন পক্ষপাতকে সমর্থন করা যায়। আমারও বিষয়টা কেমন যেন লেগেছে। আশরাফুল, নাফিস বা কাপালী বাদ পড়লে আকরাম চুপ ছিলেন আর ভাতিজা বাদ পড়ায় তার ইগোতে লাগল ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে ঠেকছে। তবে ধরে নিচ্ছি মনের ভেতর জমতে থাকা চাপা ক্ষোভের বহি:প্রকাশ এই পদত্যাগ।
এত নাটক এত ক্লাইমেক্সের পর মাঠের পারফরম্যান্স কেমন হয় তা নিয়ে একটা সন্দেহ ছিল। মাশরাফি-রাজিব-সাকিবদের বল আর তামিম-নাজিম-নাসির-সাকিবদের ব্যাট তা হতে দেয়নি। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংটা ছিল চমৎকার। শেষদিকে নাজিমের হাতে সৈয়দ আজমলের জীবন পাওয়াটা যেন চাঁদের কলঙ্ক হিসেবে এল। দুই চাঁটগাইয়া তরুণের ওপেনিং জুটি ছিল চমৎকার। সাবধানী কিন্তু আক্রমনাত্নক জুটি বাংলাদেশের দরকার ছিল। নাজিমুদ্দীন-তামিম জুটি সামনে ভাল করুক এই প্রার্থনা করছি। তিনে নাফিসকে সরিয়ে আনা জহুরুল হতাশ করেনি। তবে অসময়ে আফ্রীদিকে মারতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসার মধ্যে সেই চিরায়ত বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের চরিত্র পাওয়া যায়। রহিম, রিয়াদ এলো আর গেলো। তাদের মনে হয় কোন তাড়া ছিল! পরের গল্প তিনজনের। তামিম, নাসির আর সাকিব। তিন তরুণ। একজনের ঘাড়ে নানা অপবাদ। সে বেয়াদপ, সে অভদ্র, সে কথা শোনে না, তার চাচার জন্য সে দলে, বিপিএলে বিদেশী কোচের সাথে ঝামেলা করেছে আরো কত কি। সেই তামিম খেলল স্বভাববিরুদ্ধ ইনিং। আউট হবার আগে কোন খুঁত ছিল না তার ইনিংসে। ফিফটি করার পর সে যেভাবে ব্যাট তুলে ধরেছিল তাতে অনেকের মুখে যে চড় পড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। দুর্ভাগ্য তামিমের। ফিফটির পর বেশি সময় থাকতে পারেনি, হয়তো ক্লান্তি তার কারণ। তামিমের পর সাকিব-নাসির খেলাকে যেভাবে বাংলাদেশের নাগালে এনে ফেলেছিল তা দেখার মতো। বিপিএল এই মানসিকতা সৃষ্টিতে একটু হলেও অবদান রেখেছে। শেষ দিকে অবশ্য যোগ্য সঙ্গীর অভাবে সাকিবের পক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া সম্ভব হয়নি। মাশরাফি, রাজ্জাক, শফিউল এদের অসময়ে উইকেট ছুঁড়ে আসা তাই বুকে শেলের মত বিধেছে। তবুও, বাংলাদেশ হারার আগে হারেনি। লড়াকু বাংলাদেশ দেখা গেল পাকিস্তানের সাথে। বাকি দুটো ম্যাচের অন্তত একটিতে জয় চাই। তা যদি হয় ভারতের বিরুদ্ধে তবে তা হবে সীমান্ত হত্যার দারুণ জবাব। তামিম যেমন জবাব দিয়েছে, বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা ভারতকে হারিয়ে সীমান্তে অপমানের জবাব কি দিতে পারবে ?

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Like us on Facebook