Ads 468x60px

সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৫

ওপেনসুয্যেতে আর্ডুইনো ইনস্টলেশনের পদ্ধতিসমূহ


ইদানিং ঘরে বসে ইলেক্ট্রনিক্স প্রজেক্টের জন্য আর্ডুইনো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শিক্ষকতা পেশায় জড়িত বলে আমাকেও তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। এর আইডিই ক্রস প্লাটফর্মের বলে উইন্ডোজ, লিনাক্স, ম্যাক সহ সকল অপারেটিং সিস্টেমে চলে। আমি উইন্ডো‌জ এইট ও উবুন্টুয় আর্ডুইনো ইনস্টল করেছি, চালিয়েছিও। কদিন আগে ওপেনসুয্যে ইনস্টল করলাম ল্যাপটপে, ওটাতেও আর্ডুইনো ইনস্টল দেয়া দরকার ছিল। তাই ইনস্টল করলাম কোন ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই। আজ সেগুলো জানাতে লিখতে বসলাম।




ওপেনসুয্যেতে আর্ডুইনো আইডিই ইনস্টল করা যায় তিন পদ্ধতিতে। একটি হলো গ্রাফিক্যালি, অন্যটি কমান্ড লিখে এবং সর্বশেষ ভার্সন ব্যবহার করতে চাইলে মূল ওয়েবসাইট হতে কমপ্রেসড ফাইল নামিয়ে এক্সট্রাক্ট করে।

গ্রাফিক্যালি আর্ডুইনো ইনস্টলেশন

প্রথমেই কিকঅফ মেনুতে গিয়ে ইয়াস্ট খুলতে হবে।

Applications → System → Control Center (রুট পাসওয়ার্ড দিতে হবে)

ইয়াস্টে গিয়ে সফটওয়্যার ম্যানেজম্যান্টে আর্ডুইনো লিখে খুঁজলে কিছু তালিকা চলে আসবে। এরপর ইনস্টলের জন্য লিস্টে রাইট ক্লিক করে ইনস্টলে টিক চিহ্ন দিয়ে একসেপ্ট বাটনে ক্লিক করলেই চলবে।

আরেকটা গ্রাফিক্যাল পদ্ধতি হলো ওয়ান ক্লিক ইনস্টলেশন। ওপেনসুয্যের সফটওয়্যার (https://software.opensuse.org/package/arduino) পেজে গিয়ে আর্ডুইনো ঠিক ভার্সনটি বেছে নিয়ে আনস্টেবল প্যাকেজ দেখাতে বলুন এবং ওয়ান ক্লিক ইনস্টলেশনে ক্লিক করুন।


কমান্ড দিয়ে আর্ডুইনো ইনস্টলেশন

এজন্য কনস‌োল বা টার্মিনাল খুলতে হবে। কিকঅফ মেনু খুললে ফেভারিট অ্যাপ্লিকেশনের তালিকায় টার্মিনাল পাবেন, ওটায় ক্লিক করে টার্মিনালে প্রবেশ করুন।

টার্মিনালে গিয়ে নিচের কমান্ডগুলো দিলেও আর্ডুইনো ইনস্টল হয়ে যাবে। প্রথম কমান্ড দিয়ে রিফ্রেশ, পরের কমান্ড দিয়ে রিপোজিটরি আপডেট করা হচ্ছে, শেষ কমান্ড দিয়ে আর্ডুইনো ইনস্টল করা হচ্ছে। এরপর ইনস্টল করবেন কিনা অপশান আসবে, সেখানে y লিখে সম্মতি জানাতে হবে। সুডো দিয়ে রুট এক্সেস করা হয়, পাসওয়ার্ড দেয়া লাগবে সেক্ষেত্রে।

sudo zypper ref
sudo zypper up
sudo zypper install arduino
sudo usermod -a -G dialout,lock,uucp <user name>

এভাবে কমান্ড না দিয়ে শুরুতেই রুট এক্সেস নিশ্চিত করেও ইনস্টলেশন সম্ভব। সেক্ষেত্রে নিচের কমান্ডগুলো দিতে হবে। প্রথম কমান্ড দিলে পাসওয়ার্ড চাইবে। ওটা দিয়ে রুট একসেস নিশ্চিত করে ধাপে ধাপে রিফ্রেশ, আপডেট ও ইনস্টলেশন সম্পন্ন করুন।

~> su
# zypper ref
# zypper up
# zypper install arduino
# usermod -a -G dialout,lock,uucp <user name>

এখানেই শেষ নয়। লগ-আউট করে লগ-ইন করলে টার্মিনালে আর্ডুইনো লিখেই আর্ডুইনো আইডিই খুলতে পারবেন।

ইনস্টল না করে আর্ডুইনো ব্যবহার

এজন্য চলে যান আর্ডুইনোর মূল ওয়েবসাইটে (www.arduino.cc); ডাউনলোড করে নিন সাম্প্রতিক ভার্সনের কমপ্রেসড ফাইল। রাইট ক্লিক করে এক্সট্রাক্ট করে নিন ডাউনলোডকৃত ফাইল। নতুন যে ফোল্ডার পাবেন ওটায় আর্ডুইনো নামে একটি ফাইল দেখা যাবে। ওটায় ক্লিক করলেই চালু হয়ে যাবে আর্ডুইনো আইডিই।

যারা এত ঝামেলা পছন্দ করেন না তারা আরো সহজে কাজ সারতে পারেন। টার্মিনালে নিচের কমান্ডগুলো দিয়ে যান। আর্ডুইনো নেমে, এক্সট্রাক্ট হয়ে খুলে যাবে।

wget -c http://downloads.arduino.cc/arduino-1.6.3-linux64.tar.xz

tar -xJf arduino-1.6.3-linux64.tar.xz

cd arduino-1.6.3

sh arduino

আমি ৬৪-বিট ভার্সন নামিয়েছি বলে এই লিঙ্ক ব্যবহার করেছি। আপনার ক্ষেত্রে তা ৩২ বিট হতে পারে। চোখ বুঁজে কপি পেস্ট করার পূর্বে কি নামাচ্ছেন নিশ্চিত হয়ে নিন। দ্বিতীয় লাইন দিয়ে কমপ্রেসড ফাইল খুলছি, তারপর আরডুইনো ফোল্ডারে ঢুকে আর্ডুইনো চালানোর কমান্ড দিয়েছি। 

আজ আপাতত এটুকুই। সামনের লেখায় অন্য কোন টিপস শেয়ার করবো।

শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫

আমি বাংলায় লিখতে চাই

খুব ছোটবেলায়, যখন প্রাইমারী লেভেলে পড়ি তখন গল্পের বই পড়তাম। সেবার তিন গোয়েন্দার পাশাপাশি কিশোর পত্রিকা, কিশোর তারকালোক পড়া হতো। কমিক্সেরও ভক্ত ছিলাম। পাশাপাশি ছিল হূমায়ুন আহমেদ, সত্যজিৎ রায়সহ ভারতীয় বিভিন্ন লেখকদের গল্প। সেগুলো পড়ে পড়ে লেখক হওয়ার শখ জাগে। এবং সেই শখ মিটাতাম গল্প লিখে। পাকশীর দিস্তা দিস্তা কাগজে গল্প লিখতাম। কি মজার দিন ছিল সেগুলো। কম্পিউটার ছিল না, বাংলাদেশে ডিশ কালচার সেভাবে গড়ে ওঠেনি। সেলুলারের যুগ ছিল না সেটা, সেটা ছিল ল্যান্ডফোনের যুগ।

কালের শ্রোতে একসময় কম্পিউটার এল বাসায়। অবাক হয়ে দেখলাম মোস্তফা জব্বারের ছবি ভেষে উঠছে লগ-ইন করলেই। বাংলা লিখতে হলে বিজয় শিখতে হবে। আমিও বাংলা বিজয় কী-বোর্ডে বিজয় আয়ত্ব করলাম। মনে পড়ে উচ্চ-মাধ্যমিকের পর কি যেন ওঠানোর জন্য বিজয় দিয়ে বাংলা দরখাস্ত লিখে প্রিন্ট করেছিলাম। বাংলায় প্রিন্ট করে কলেজে দরখাস্ত দিচ্ছি, ভাবতেই শিহরণ জাগছিল সেসময়।

আরো সময় গেল। ভার্সিটিতে উঠে ইন্টারনেট পেলাম। ইন্টারনেটে বাংলা লেখা যেত না। পত্রিকা পড়ার জন্য ওদের ফন্ট ইনস্টল করতে হতো। ইন্টারনেটের গতি ছিল বেজায় মন্থর। এদিকে কম্পিউটার এসে আমার লেখা-লেখির শখ চাপা দিয়ে ফেলেছে। বিজয়ও ভুলতে বসেছি।

সম্ভবত ২০০৮ বা ২০০৯ সালের দিকে প্রথম ইন্টারনেটে বাংলা লেখা শুরু করলাম। শুরুতে অভ্র পরবর্তীতে প্রভাত লেআউটে। প্রভাত আমার কাছে সহজ মনে হলো। প্রভাত সহজ লাগার কারন আমি লিনাক্সে প্রভাতে বাংলা লিখতাম। তাই উইন্ডোজে অভ্রে যখন প্রভাত লেআউট যুক্ত করা হয়েছিল বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম।

বিজয়ে লেখা ছেড়েছি ২০০৪'র দিকে। প্রায় দশ বছর বিজয়ে লিখিনা। এখন নতুন করে শেখার ধৈর্য নেই। একই কথা খাটে এন্ড্রয়েডের বেলায়ও। মায়াবীর চেয়ে রিদ্মিক কী-বোর্ডে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। বিজয় এখন এন্ড্রয়েডেও এসেছে। আমার কাছে কিন্তু রিদ্মিকই কাজের। আমি চাই না বাংলা ভাষায় মনের ভাব প্রকাশের জন্য কোন বাধা আসুক। আমি মোস্তফা জব্বার সাহেবকে অপমান করতে চাই না, উনার অনুষ্ঠান বিটিভিতে দেখে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ পেয়েছি, এটা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু এখন বিজয় নিয়ে তার বাড়াবাড়ি কিছুতেই কাম্য নয়। নতুনকে মেনে নেয়ার মানসিকতার অভাব আমাদের প্রতি পদে পদে ক্ষতি করছে। তাইতো নতুন উদ্যোক্তা, নতুন আবিস্কার পাচ্ছিনা। গুগল প্লে-স্টোর থেকে রিদ্মিককে সরিয়ে দেয়াটা কাম্য নয়।

আমরা কি পারিনা ইউনিজয় বাদ দিয়ে বাকি লেআউটগুলো নিয়ে এপ বানাতে ? নবীন-প্রবীন প্রোগ্রামারদের প্রতি আহ্বান রইল নতুন কিছু করার জন্য। যা নিয়ে কেউ কপিরাইট বা পেটেন্টের হুমকি না দিতে পারে।

আমি বাংলায় লিখতে চাই, যেভাবে লেখা আমার জন্য কম কষ্টের সেভাবে। সহজে মনের কথা ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করতে চাই, মানুষের মতামত জানতে চাই লেখা সম্পর্কে; আসুন সবাই সচেতন হই। বাংলা ভাষা নিয়ে ব্যবসায়িক মনোভাব পরিহার করে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সহায়তা করি।

বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০১৫

লিঙ্ক৩ বাদ দেয়ার নেপথ্যে

অনেকদিন, প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ব্যবহার করার পর লিঙ্ক৩ বাদ দিলাম। কেন বাদ দিলাম কারনগুলো শেয়ার করা জরুরী মনে হচ্ছে, তাই এই লেখার অবতারনা।

১। প্রথম কারন বকেয়া বিল। আগে বাসায় লোক এসে বিল নিতো, পরে নিজেদের গিয়ে দিয়ে আসতে বলা হলো। একসাথে কয়েক মাসের বিলও দিয়েছি। চার মাস একসাথে। কখনো মিস হয়নি,তবে দেরি হয়েছে ঠিক। যখনি ওরা ফোন দিত বিলটা দিয়ে দিন আমি যেভাবেই হোক দেয়ার ব্যবস্থা করে দিতাম। তবে গত কয়েক মাসে দুই বার আমাকে না বলে হুট করে লাইন কেটে দিয়েছে। পুরনো গ্রাহক বলে একটিবার জানানোর সৌজন্যতাও দেখায়নি তারা। ফেব্রুয়ারী মাসেও তাই হলো। আমি বললাম বিল দিয়েছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত তাদের ফেব্রুয়ারীর বিলের কপি আমার হাতে আসেনি। তাই পরিচিত একজনের সাথে আলাপ করে লাইন একটিভ করালাম।

২। কাস্টমার কেয়ারের উদাসীনতা দ্বিতীয় কারন। যেদিন ফেব্রুয়ারীর বিল দেব, মানে রবিবার, ১ মার্চ সেদিনের আগেই শনিবার দুপুর থেকে লাইন বিচ্ছিন্ন। ফ‌োন দিলাম কাস্টমার কেয়ারে। ইদানিং যেটা হয়েছে লাইন বিজি থাকে। এদিকে আমার ব্যালেন্স কমতে থাকে, কেউ ফোন ধরেনা। তারপরেও ফোন ধরলে জানালাম সমস্যার কথা। উনি দেখবেন কথা দিলেন। আমি ১ তারিখে ফেব্রুয়ারীর বিল দিলাম। মার্চেরটা দিলাম না, মন টানলো না। লাইন ঠিক হলে দিব ঠিক করলাম। তারপর রবিবার গেল, খবর নাই। সোমবার সকালে ফোন দিলাম। জানালো ঠিক করে দিবে। সোমবার গেল। এবার মঙ্গলবারে জানালাম দিনের মধ্যে লাইন ঠিক না করলে লাইন আর রাখবোনা। তাদের ফোনে পাইনি, তাই মেইল দিলাম জিপির লাইন দিয়ে। ওরা আড়াইটা পর্যন্ত সময় নিল, তারপরও খবর নাই। সন্ধ্যায় আবার মেইল দিয়ে জানিয়ে দিলাম আপনাদের প্যাকেজ আর ব্যবহার করবো না।

পরদিন সকালে একজন ফোন দিল কেন আমি এমন মেইল দিয়েছি। উনাকে খুলে বললাম। উনি ঠিক করে দিবেন বললেও রাজি হলাম না। আর কত ধৈর্য ধরা যায়। পরদিন মানে গতকাল ফোন দিয়ে বললো বুধবার রাতে উনারা উনাদের জিনিসপত্র নিয়ে যাবেন। আমি বাসাতেই ছিলাম সেজন্য। উনাদের এবারও খবর নাই। আজকেও তারা আসেন নাই।

৩। ইউটিউব ভিডিও নির্বিঘ্নে দেখা যায় না। দেড় এমবিপিএস নিয়েও যদি ঠিকমতো ইউটিউব বা খেলা দেখতে না পারি তাহলে এত টাকা দিয়ে সংযোগ রাখার দরকার কি ? দেশীয় টরেন্টের স্পিডও যেমন হওয়ার কথা তেমন না। তাই এবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম।

কাস্টমার কেয়ার যদি সাপোর্ট টিম শনিবারেই বা রবিবারে পাঠাতো তাহলে হয়তো লিঙ্ক৩ বাদ দিতাম না। উনারা নিজেরাই একজন গ্রাহক হারানোর জন্য দায়ী।

তবে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর লিঙ্ক৩ দারুণ সার্ভিস দিয়েছে বলতেই হয়। শুরুর দিকে সাপোর্ট ভাল ছিল। ফোন দিলে কয়েক ঘন্টা বড়জোর ১ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হতো। এখন তো ফোন দিয়েই পাইনা। উত্তরার মতো আপগ্রেডেশান যদি এদিকেও হতো তাহলে আরো রাগ হতো। তার আগেই বিদায় জানিয়ে দিলাম পছন্দের আইএসপিকে।

আশা করি ভবিষ্যতে এমন অভিজ্ঞতা কারো হবেনা।

বুধবার, ৪ মার্চ, ২০১৫

ক্রিকেট, বিশ্বকাপ ও সমসাময়িক ঘটনা



বেশ বড়সড় বিরতি দিয়ে লিখছি। আসলে ফেসবুকে বাংলায় স্ট্যাটাস দেয়ার ফলে, ব্লগে যা নিয়ে লিখতাম তাই ফেসবুকে লিখে ফেলে ব্লগটাকে শূন্য করে রাখা হয়েছে এতদিন। লেখকস্বত্তাকে বাঁচানোর জন্য ফেসবুক যেমন উপকারি, ব্লগও তেমনি। 

কি লিখবো তা নিয়ে ভাবছিলাম কিছুদিন। রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি কত নীতি চোখের সামনে। তবে ওসবে না গিয়ে যেটায় আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি সেই খেলা মানে ক্রিকট নিয়েই লিখছি। এটা নিয়ে লেখার কারন বিশ্বকাপ। এবং তার কিছুদিন পূর্ব হতে রসালো মশলাযুক্ত খবরাখবরের প্রচার।

ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলা দেখতাম, তখন ছিল মার্ক টেইলর, ব্রায়ান লারা, ডেমিয়েন মার্টিন, সাঈদ আনোয়ার, ওয়াসিম আকরাম, প্রাসাদ, শ্রীনাথ প্রমুখের যুগ। শারজায় কদিন পর পর ওয়ানডে টুর্নামেন্ট হতো। এশিয়া কাপও হতো। টিভিতে (পড়ুন বিটিভিতে) পাকিস্তান যে টুর্নামেন্টে থাকতো সেটি প্রচার করতো। আমরাও অবাক বিস্ময়ে দেখতাম আফ্রিদীর ব্যাটিং তান্ডব। প্রায়শই সে মিস হিট করে মিড অন বা মিড উইকেট জোনে ক্যাচ দিয়ে ফিরতো। কপাল ভালো হলে ডিপ মিড উইকেট বা ডিপ মিড অফে মিস হিট হওয়া বল ল্যান্ড করতো। তা দেখেই আমাদের দর্শককূলের হৃদয় ভরে যেত। আবার ওয়াসিম আকরাম বা ওয়াকার ইউনুসের বল দেখে মনে হইতো একেকটা কামানের গোলা, বিশেষ করে ইন্ডিয়ার সাথে যখন তাদের গোলা শচীনের তিন দন্ডের একটি বা দুটোকেই সমূলে উপড়ে ফেলতো তখন অনেকেই বুনো আনন্দে কেঁপে উঠতো। আমার অবশ্য তখন কোন অনুভূতি হতো না। আমি খুঁজতাম আমাদের আনিসুর রহমান আনিস বা সাইফুল ইসলামকে। তাদের বল কেন শচীনের দন্ডকে ক্ষত-বিক্ষত করে না? আমাদের আকরাম খান বা বুলবুলের ব্যাট কেন তরবারি হয়ে ওয়াসিম আকরাম বা অনিল কুম্বলের বলকে কচুকাটা করে না। যাই হোক সেবার মিনি বিশ্বকাপ হলো বাংলাদেশে। স্থান পাকিস্তান আমলে ক্রিকেটের জন্য বানানো স্টেডিয়ামঢাকা স্টেডিয়াম বা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। আহা এর সাথে ক্রিকেটটা যুক্ত হলে মনে বহু প্রশান্তি পেতাম। বঙ্গবন্ধু ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তা হয়নি, হয়তো হবেও না।

যা বলছিলাম, মিনি বিশ্বকাপ হয়েছিল সেবার। মানবজমিন তখন শিশু বয়সে। ট্যাবলয়েড কি শিখতে শুরু করেছে বাংলাদেশিরা। আমাদের বাসায় চার-পাঁচটা পত্রিকার একটি ছিল মানবজমিন। মানবজমিনে মমতা কূলকার্নির শোর জন্য নরম-গরম ছবি যেমন প্রকাশ হতো তেমনি আফ্রিদীর ব্যাটিংরতো ছবিও দেখা যেত। যার যেটার অভাব সে সেটা দেখে আহা উহু করতো। সেই মানবজমিনে নিয়মিত মিনি বিশ্বকাপ নিয়ে প্রতিবেদন থাকতো। চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। কালিনান, ক্লুজনার, ডোনাল্ড আর হ্যান্সি ক্রোনিয়ের দল। ওরা খুব খুশি। বিশ্বকাপ জিততে পারেনি, মিনি বিশ্বকাপ তো পেরেছে। আমিও মনে হয় ওদের জন্য দুর্বল তখন হতে। সেসময় আফসোস ছিল বাংলাদেশে খেলা, কিন্তু বাংলাদেশ কেন নাই? চাপা দু:খ নিয়ে খেলা দেখতাম, পরদিন মানবজমিনে রিপোর্ট পড়তাম। 

সেসময় কোন এক ললনা আফ্রিদীর পৌরষত্ব দেখে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে। সেসময়ের বাংলাদেশে ওটা অবাক করার মতো ঘটনা বৈকি। ললনাটি কে ছিল, কি তার বংশ পরিচয় জানা হয়নি। বাংলাদেশের কোন তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ নয়; তার দরকার পাকিস্তানি পাঠান আফ্রিদী। সে নিয়ে সেসময় পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছিল। ললনার শখ আফ্রিদী পূর্ণ করেনি। সে এখন পাঁচ সন্তানের পিতা, বৌ অবশ্যই সাচ্চা পাকিস্তানি। ওয়াসিম আকরাম, তার আগে ইমরান খানও নাকি বাংলাদেশি ললনাদের উইশ লিস্টে ছিল। আমি বুঝিনা চোখ সবসময় ঐসব লোকদের দিকে যায় কেন? ভারতের কপিল দেব, সুনিল গাভাস্কার, তরুণ সৌরভ বা রাহুল দ্রাবিড়ও তো ছিল। বাংলাদেশের বুলবুল বা নান্নুও কম কিসে। সুজনের কথাই বা ভুলি কি করে। তার গতির কাছে সবাই ফেল। তবুও রং দেখে মেয়েরা ওদের প্রতি আকর্ষিত হয়ে লাজ শরম ভুলে হাজার হাজার চোখের সামনে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে, আফ্রিদী ম্যারি মি।

প্রাককথন মনে হয় বড় হয়ে গেল। আসল যায়গায় এসে পড়েছি। এত বছর পরে, এক যুগেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড়কে নিয়ে সেই জাতীয় খবর শুনলাম, দেখলাম বলা যুক্তিযুক্ত। ইঙ্গিত হচ্ছিল রুবেলের দিকে। বাংলাদেশের রুবেল। পেসার রুবেল। আমাদের হ্যাট্রিকম্যান রুবেল, কিউইদের চুনকামে দূর্দান্ত ভূমিকা রাখা রুবেল। রুবেল ভাল ছেলে, দেখে তাই মনে হয়। যদিও বল করার সময় লাইন, লেন্থ যখন অপ্রত্যাশিত রকমের বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয় তখন সব ভুলে তাকে বকা আমিও দেই। বকা তাকেই দেয়া যায় যাকে ভালোবাসা হয়। বাংলাদেশ দলকে মানুষ বকা দেয় কেন? কারন তাদের ভালোবাসে বলে। তাদের সন্তানের মতো দেখে অনেক দর্শক। আমি অবশ্য ছোটভাই, বড় ভাই হিসাবেই দেখতে পছন্দ করি। দলের অনেকেই আমার প্রকৌশল ডিগ্রী নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তাই টানটা অন্যরকম। তো সেই বাংলাদেশ দলে হিরু টাইপ প্লেয়ার বলতে একজনকেই চিনতাম। সে আবার বল করার সময় উহু আহা শব্দ উচ্চারণ করে ব্যাটসম্যানকে উত্তেজিত করতো। ফলাফল ব্যাটসম্যানের ব্যাটে চুমো খেয়ে বল স্লিপে, কিন্তু একি! তার উহু আহা শব্দে ফিল্ডারও কিঞ্চিত উত্তেজিত এবং তাই তার হাত বলটাকে ধরে রাখতে অক্ষম হয়ে মাটিতে পড়তে সহায়তা করল‌ো। 

সেই স্বঘোষিত প্লেয়ারকে বাদ দিয়ে রুবেলকে নিয়ে মেয়েরা স্বপ্নের জাল বুনে ভাবতেও পারিনি। কোথাকার কোন সুখি মেয়ের সাথে নাকি রুবেলের সম্পর্ক। ইদানিং অনেক অনলাইন পত্রিকা আছে, সেগুলো তা নিয়ে কম রসালো খবর বের করেনি। ওদের অডিও স্ক্যান্ডাল বেরিয়ে গেল। প্রযুক্তি জগতে আনাগোনার সুবাদে জানি এটা ফেইকও হতে পারে, তবুও বাংলাদেশি মন তো! বাস্তবতা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বাদ দিয়ে যা দেখছি বা শুনছি তাই বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। ওসব নিয়ে কোর্ট কাচারি হলো। রুবেলকে নিয়ে নানা মুনি নানা মত দিল। কেউ মেয়ের জন্য কেউবা ছেলের চরিত্রর জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল। লাইক, কমেন্টে নানা মতবাদ পাওয়া গেল। সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে রুবেল গেল ক্যাঙ্গারুর দেশে। বিশ্বকাপ খেলতে। ওখানেও শান্তি নাই। রুবেলের এক সতীর্থকে রহস্যজনক কারনে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হলো। আবার এক সাংবাদিক ইভ টিজিং এর মামলায় জড়িয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে ধৃত হলো। তার পাশে যুক্ত হলো এক ললনার প্ল্যাকার্ড। সে রুবেলকে বিয়ে করতে চায়। প্রভার দুষ্টুমি ভরা ভিডিও দেখেও যেমন এক সাহসী যুবক তাকে ঘরে তুলেছে তেমনি সাহসীনি মেয়েটাও রুবেলকে হ্যাপি করতে চায়। যদি রুবেল তিনবার কবুল বলে তাকে সে অধিকার দেয়। অনেকে অনেক ইঙ্গিত করলেও বিষয়টা আশা জাগানিয়া। মেয়েরা এখন সচেতন, আফ্রিদী নয় তাদের জহুরির চোখ এখন বাংলাদেশের টাইগারদের দিকে। তাদের দেখার জন্য বিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসক (রমনী অবশ্যই) ৮৪ ইঞ্চি টিভি কিনে সেটি ভিডিও করে ফেসবুকে বা ইউটিউবে আপলোড করেছিলেন। বেচারির কপাল খারাপ, ডেলিভারির সময় সে টিভি দেহত্যাগ করেছে। পরে তিনি আবার টিভি কিনেছিলেন কিনা বা নতুন টিভি পেয়েছেন কিনা জানা যায়নি। পরবর্তীতে তিনি স্বল্প বসনে ছবি তুলে তা দেখানোর কাজে মন দিয়েছেন।

রুবেলের কান্ডে সব থেমে গেলে চলতো, তা আর কই হলো। নামায পড়তে গিয়ে দর্শকের গাল হজম করতে হলো মাশরাফিকে। কেমন সে দর্শক, যে টাইগার দলপতিকে গাল দেয়। বাস্তবতা বলে দলপতিকে না দিয়ে জনৈক ওপেনারকে গালাগাল করলে বেচারা দর্শককে এত হেনস্থা হতে হয়না। তখন ফেবুর সাপোর্টারকূল হ্যাপি থাকতো। মিডিয়াও তাকে হিরো বানিয়ে দিত।

ঘটনার প্যাঁচ আরো লেগেছে যখন একটা ছবি দেখা গেল ফেসবুকে। আমাদের ম্যানেজার, মানে সুজনকে ক্যাসিনোতে দেখা গেছে। উনি কি করতে চেয়েছিলেন আর কি করতে পেরেছেন তা না জানা গেলেও ছবি দেখে বুঝা যায় উনি ক্যাসিনোতে গিয়েছেন। জানা যায় রাত তখন প্রায় দেড়টা। একগাদা ক্যাচ ফেলে, শিশুসুলভ ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বাংলাদেশ দল তখন বিপর্যস্ত। ম্যানেজার সাহেব তখন ক্যাসিনোতে জীবন উপভোগ করতে ব্যস্ত। এর ফল কি হবে তা এখনো জানা যায়নি। ম্যানেজারের কপালে যাই থাকুক বাংলাদেশ দল যেন থাকে জয়ের আবেশে, এটাই চাওয়া।

বাংলাদেশ দল এখন শীর্ষ আটে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বাঘা বাঘা সব দল, অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড শ্রীলঙ্কা ইংল্যান্ড এদের যেকোন একজনকে হঠিয়ে বাংলাদেশ পরের রাউন্ডে যাবার কঠিন কিন্তু সম্ভবপর স্বপ্ন দেখছে। আমরা স্বপ্ন দেখবো, অবশ্যই দেখব। তবে স্বপ্ন দেখার মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না থাকে সেটাও মনে রাখা জরুরী। স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার কঠিন কাজটা ওদেরকেই করতে হবে, ব্যর্থ হলেও সমর্থন দিয়ে যাওয়া দর্শকদের কাজ। ক্রিকেটারদের দায়িত্ব যেমন ভালো খেলা, আমাদের দায়িত্বও তেমন ভালো সমর্থন দেয়া। এখন ফেসবুকের একটা স্ট্যাটাস অনেককিছু বহন করে, ব্যবহারকারীর রুচিবোধ, মানসিক পরিপক্কতার আঁচ পাওয়া যায় ফেসবুক স্ট্যাটাসের মধ্যে। তাই গালিগালাজময় একটা স্ট্যাটাস যেমন মন খারাপ করে দিতে পারে খেলোয়াড়দের, উৎসাহমূলক স্ট্যাটাসে দ্বিগুণ উদ্দীপনা পেতে পারে ওরা।

আহা, অনেক বকবক করা হয়ে গেল। প্রায় তিন পৃষ্ঠা হয়ে গেল। অনেকদিন পর লিখছিতো, তাই পাঠককূলের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। একদিন বাদে বাংলাদেশের খেলা স্কটল্যান্ডের সাথে। মনে পড়ছে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের কথা। ন‌বীন বাংলাদেশ ওদের হারিয়েছিল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও। এবারও তাই হবে, এবং রানরেটটাও বাড়িয়ে নিবে বাংলাদেশ এই আশা করছি। বাংলাদেশের জয় আরেকটা লেখা দেয়ার সুযোগ করে দিবে, এই ছোট্ট ইচ্ছাটার কথা জানিয়ে দিলাম।

Like us on Facebook