Ads 468x60px

শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১২

বাংলাদেশের আরেকটি ভারতবধ

জয়। একটি শব্দ। যার তাৎপর্য অনেক। ভাষায় প্রকাশ করা যায় না কখনো কখনো। এমন ক্ষণ সবসময় আসে না। গতকাল যেমন এল। স্থান মিরপুর শের-এ-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের অহমিকায় চপেটাঘাত করে ছিনিয়ে নেয় বিজয়। এই সেই ভারত যারা ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার পরেও বাংলাদেশকে ওদের দেশে আমন্ত্রণ জানায়নি। অজুহাত হলো দর্শক হবে না। বাংলাদেশ সহজে হার মেনে যাবে কিনা। তাই বার বার ভারতের সাথে জিততে মন চায়। ইচ্ছা করে তাদের অহংবোধটাকে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে নামাতে। সীমিত সামর্থ্য, বিসিবির বিমাতাসুলভ আচরণ, আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক বিচারে সহজে জয় পাওয়া হয়ে ওঠে না। তাই যখন জয়টা আসে তখন উচ্ছ্বাসের জোয়ার নামে। কে ভেবেছিল এশিয়া কাপেই রচিত হবে আরেকটি ভারতবধ কাব্য? যে দলে শচীন, ধনী, বিরাট কোহলি, রায়নার মত ব্যাটসম্যান তাদের সাথে জয় পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। যতোই আমরা পাকিস্তানের সাথে জয়ের সম্ভাবনা জাগাই না কেন। ভারত স্কোরবোর্ডে ২৮৯ রান তোলার পর ভেবেছিলাম ২৫০-২৬০ করে খেলাটাকে ক্লোজ করবে হয়তো বাংলাদেশ। আক্ষেপে পুড়তে হবে আবারো‌। শচীনের শতরান, কোহলি ও রায়নার জোড়া অর্ধশতক আর রাজিবের উদার হস্তে দেওয়া রানে ভারত প্রায় ৩০০ রান জড়ো করে। শচীন এক বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা শতকের শতক পুরো করতে যেন একটু হিসেবি ছিল। বাংলাদেশের বোলিং বা ফিল্ডিংকেও অগ্রাহ্য করা যায় না। ব্যাটিং করতে নেমে ধীরে চলো নীতি মেনে চলতে লাগলো দুই ওপেনার নাজিম ও তামিম। নাজিম মেরে খেলে অভ্যস্ত। তাই তর সইলো না। মাঝ ব্যাটে বল নিতে না পেরে সে আউট। জহুরুল ইসলাম অমির ব্যাটিং বিপিএলে খুব একটা যুৎসই লাগেনি। তবে জানতাম সে পারে, বিপিএলে চেষ্টাও করেছে। জাতীয় দলে দুই বছর পর এসে তিন নম্বর জায়গাটা পাকা করার পথে এক ধাপ এগিয়ে দিল গতকালের ফিফটি। শাহরিয়ার নাফিসকে দলে আসতে হলে খুব ভাল করতে হবে। তামিম যেন পণ করেছে সিরিয়াস ব্যাটিং করবে। গতকালও তাই করলো পয়লা ম্যাচের মতো। মারমার কাটকাট তামিম নিজেকে খোলস বন্দী করে সাবধানী ব্যাটিং দিয়ে দলকে অনেকটা এগিয়ে নিয়েছিল। এরপর নাসিরের উপরে উঠে আসা, সাকিবের ঝড়ো ব্যাটিং দলকে বিশ্বাস এনে দেয় আমরা পারবো। সাকিবের ভাগ্য খারাপ। স্টাম্পিং করেছিল কিপার, পা ছিল লাইনের উপরে। বেনিফিট অব ডাউট যায় সাধারনত ব্যাটসম্যানের পক্ষে। আর এবার গেল ভারতের পক্ষে। হয়তো দূর্বল বলে ছুরি চালানো সহজ ভেবেছে শ্রীলঙ্কান তৃতীয় আম্পায়ার। অশোকা ডি সিলভা কম ভুগায়নি বাংলাদেশকে, এখন নতুন একজনের আবির্ভাব ঘটলো। সাকিব ছিল বিনোদনের কেন্দ্র। তার প্রতিটা মার দর্শকের হৃদয়ে কাঁপুনি ধরিয়েছে। একটু একটু করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ বেলায় দায়িত্ব পড়ে মুশফিকের ছোট কাঁধে। সাথে নাসির হোসেন। বল আর রানের ব্যবধান ক্রমশ বেড়ে চলছিল। সাহসী অথচ সাবধানী ব্যাটিং করছিল মুশি-নাসির জুটি। ইরফান পাঠানের করা আটচল্লিশ তম ওভারে দুটো ছয় মেরে হিসাব সহজ করে ফেলে মুশি। ১২ বলে ১৬ রান কঠিন কিছু নয়। প্রভিন কুমারের ৪৯তম ওভারের প্রথম দুই বলে ছয় চারে করা ১১ রান ম্যাচ এনে দেয় বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়। আরেকটি জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যায় সবাই। উল্লাসে মেতে ওঠে গ্যালারি, ড্রেসিংরুম আর পুরো দেশ। উত্তেজনায় নাসির নাজিমের মতো শট খেলে উইকেট দিয়ে আসে। তখনো ২ রান করা বাকি। রিয়াদ এসে ৪ বল বাকি রেখে উইনিং শট যখন খেলল তখন বাঁধ-ভাঙা আনন্দে ভেসে গেল পুরো দেশ। পেরেছি, আমরা পেরেছি। ভারতকে আরো একবার হারিয়েছি। এ জয়ের পেছনে দৃশ্যমান অনেকের অবদান থাকলেও একজনের অবদান অনস্বীকার্য। তার নাম মানজারুল ইসলাম রানা। একসময় জাতীয় দলে খেলতো এই তরুণ। বাঁহাতি স্পিন আর ক্রমশ ভালো হতে থাকা ব্যাটিং। ২০০৭ বিশ্বকাপে বাদ পড়ে স্থানীয় লীগে খেলছিল। ওটাই কাল হয় তার জন্য। ১৬ই মার্চ ২০০৭ মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারায় সে। পরেরদিন ভারতকে হারিয়ে জয়টা তাকে উৎসর্গ করেছিল বাংলাদেশ। কাকতালীয়ভাবে পাঁচ বছর পর তার মৃত্যুদিনে আরেকবার ভারতকে হারালো বাংলাদেশ। ব্যবধান সেই পাঁচ উইকেট। প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে রানা। কে বলতে পারে এই দিন থেকে নতুন বাংলাদেশের পথচলা শুরু হলো কিনা। এখন পালা শ্রীলঙ্কার, যে লঙ্কান আম্পায়ার সাকিবকে আউট দিল তাকে দেখিয়ে দিতে হবে বাংলাদেশকে অগ্রাহ্য করার দিন শেষ। আমরাও ফাইনালে খেলতে চাই। পাকিস্তানকে ফাইনালে হারিয়ে ১৩ বছর পর আরেকবার জয়ের স্বাদ পেতে চাই। পারবে কি বাংলাদেশ? প্রিয় ক্রিকেটার ভাইয়েরা, তোমাদের সাথে আছে আমাদের দোয়া। আর আকাশের তারা হয়ে যাওয়া রানার শুভ কামনা। পারবেনা তোমরা?

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Like us on Facebook