Ads 468x60px

রবিবার, ২ মে, ২০১০

বাংলাদেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটারেরা

বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রায়ই নানারকম প্রতিভার নাম শোনা যায়। এককালে শুনতাম জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার দুলু নাকি রিভার্স সুইপের মাস্টার। আল-শাহরিয়ার রোকনের প্রতিভা নিয়েও সাংবাদিক ভাইয়েরা দস্তার পর দস্তা কাগজ শেষ করেছেন। মেহরাব হোসেন অপিও ছিলেন মেধাবী ক্রিকেটার, ইনজুরি-বিয়ে তার ক্যারিয়ার অকালে শেষ করে দিল। সাইফুল্লাহ জেম নামী এক স্পিনার, উইকেট কিপার আতিয়ার এদের কথাও পত্রিকার পাতায় এসেছে। তবে আমি যতদূর দেখেছি, একজন দর্শক হিসেবে আমার লিস্টটা ছোট। হয়তো সবই টিভিতে দেখা, বা পত্রিকায় কিংবা রেডিওতে জাফরউল্লাহ শরাফতের ধারাবিবরনী শুনে বোঝা। ক্রিকেট একদম পিচ্চিকাল থেকে দেখতাম, ফুটবলটা আরো বেশী। তবে ক্রমেই বাংলাদেশের ফুটবলের পৃথিবীটা ছোট হয়ে গেছে, এখন জাতীয় দলে কে গেল কে আসলো তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

যাই হোক আমার চোখে বাংলাদেশের ক্রিকেট গত দশ বছরে হাতেগোনা কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারের সন্ধান পেয়েছে। যাদেরকে সঠিক পরিচর্যা করলে বাংলাদেশের ম্যাচ উইনার বেশ কয়েকজন থাকত।

প্রথমেই বলব আশরাফুলের কথা। ছেলেটা সত্যিকারের মেধাবী অল-রাউন্ডার। তাকে আমরা প্রোপার গাইডেন্স দিতে পারিনি। তার লেগ-স্পিনটা ঘষা-মাজা করলে সেও সাকিবের মত আরেক অল-রাউন্ডার হতে পারত। প্রথমদিকে আশরাফুল কিন্তু বোলিং করত। তাকে তার মত খেলতে দিলে কি হতে পারে তার প্রমাণ বহুবার আমরা দেখেছি। গতকাল পাকিস্তানের সাথে টি-20 ম্যাচে 49 বলে করা 65 রান কিঞ্চিৎ হলেও তার প্রতিভার উদাহরন দেয়। আর কতকাল সে একটা ভাল ইনিংস খেলে শীতনিদ্রায় ডুব দেবে কে জানে। সে কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বিজ্ঞাপন। কালকে যারা কমেন্ট্রি শুনেছেন তারা বুঝেছেন।

এরপরে মাথায় এল অলক কাপালীর নাম। এই ছেলের নাম প্রিমিয়ার ক্রিকেটের স্কোর-কার্ডে দেখে মনে হত সে ইন্ডিয়ান হবে হয়তো। নাহলে এত ধারাবাহিক হয় কিভাবে! মহসিন কামালদের যুগে আকরাম-বুলবুলের বিকল্প হিসেবে দলে এসেছিল কাপালী। সে সময়ের কাপালীকে দেখে ভিভ রিচার্ডসও পছন্দ করেছিলেন। আফসোস আমরা কাপালীর প্রতিভাও কাজে লাগাতে পারলাম না। আইসিএলে গিয়ে নিষিদ্ধ হলো কাপালী, এতে ক্ষতিটা কার হলো ? বাংলাদেশের ক্রিকেটের নাকি বিসিসিআই'? এখনো সময় আছে, বাংলাদেশের প্রশ্নবিদ্ধ ভঙ্গুর মিডল-অর্ডারে কাপালীই হতে পারে যুৎসই উত্তর। তার ব্যাটিং যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম হ্যাট্ট্রিক কার জানেন তো ? বোলারের নাম কিন্তু অলক কাপালী!

আফতাব আহমেদ, ছক্কা মারা সে আফতাব। আরেক জেনুইন হিটার। আইসিএল নামক ক্রিকেট-বাণিজ্যের ফাঁদে পড়ে আফতাবের ব্যাটিংও এখন জাদুঘরে রাখা কোন প্রাচীন বস্তুর মত হয়ে গেছে। এখনও মিস করি ওয়ান ডাউনে নেমে প্রতিপক্ষের বোলারদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেওয়া সে আফতাবকে। কবে তাকে স্বরূপে পাব কে জানে!

তামিম ইকবাল, দিন দিন যার ব্যাট আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে। আগে সে লেগ সাইডে ভালো ছিলো না, এখন সে ত্রুটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। তাকে আরো শাণিত করলে সে হতে পারে আমাদের হেইডেন, শেওয়াগ।

সাকিব আল হাসান, এখন সে ভালো গুরুত্ব পাচ্ছে; আশা করি সামনেও সে ভালো সাপোর্ট পাবে সবার থেকে। বিসিবির কারো পায়ের কাছে নতজানু হবে না আশা করি।

মাশরাফি মর্তুজা, যে হতে পারত প্রকৃত অলরাউন্ডার। কিন্তু তাকে অতিরিক্ত ব্যবহার করে শরীরের উপর চাপ বাড়িয়ে ইনজুরিতে ফেলে ক্যারিয়ারের অনেক সময় নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সে মনে হয় মানসিকভাবেও এখন চাঙ্গা নয়। বাংলাদেশের স্বার্থেই আগের সেই তেজী মাশরাফিকে দরকার।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, এই ছেলের হয়তো আফতাব-আশরাফুলের মত তেমন প্রতিভা নেই তবে আছে পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করার মানসিকতা। যেটা নেই আফতাব-আশরাফুলের। এই ছেলেকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না, দরকার সাপোর্ট। বাংলাদেশের ম্যাচ উইনার হবার অমিত সম্ভাবনা আছে এর মাঝে।

নাজিমউদ্দীন আরেক মারকুটে ব্যাটসম্যানের নাম। যার ফার্স্ট-ক্লাস রেকর্ড ভালো, কিন্তু সে কখনো টেস্টে সুযোগ পায়নি। পেয়েছে টি20, ওডিআইতে। আশা করি শীঘ্রই তাকে জাতীয় দলে দেখব।

আপাতত আর কারো নাম মাথায় আসছেনা। অনেকে হয়তো বলবেন জুনায়েদ, রকিবুল, মুশফিক, নাইম এরা কি প্রতিভাবান নয় ? আমি বলব, যাদের নাম বললাম এরা ঢের ভালো ওই ঠুকে খেলা জুনায়েদদের চেয়ে। অন্তত টি-20'র আসরে কাপালী-নাজিমুদ্দীনকে দেখলে ভালোই লাগত। তবে সামনে অনেক ক্রিকেট। এরা আবার জাতীয় দলে আসবে, প্রোপার সাপোর্ট পাবে এ আশাই করি।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Like us on Facebook