Ads 468x60px

শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১০

শাহরুখ খানের কনসার্ট ও নিজস্ব মত

আমি নিজেকে বাংলাদেশী বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। এর কয়েকটি কারণ হতে পারে। এক, আমার জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে তাই জন্মভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা; দুই, একাত্তরের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস দেশের প্রতি মমত্ববোধ বহুগুণ বাড়িয়েছে; তিন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কারণ তা হলো আমার ভাষা। বাংলায় আমি যেভাবে কথা বলতে পারি অন্য কোন ভাষায় তা পরিনা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ভালো ইংরেজী শিখতে পারা সৌভাগ্যের ব্যপার। আমি নিজেকে সেসব সৌভাগ্যবানদের একজন মনে করিনা এবং আমার ইংরেজীও অতোটা সমৃদ্ধ নয়। এসব বলার প্রেক্ষাপট ১০ ডিসেম্বর বৈশাখী টিভিতে হওয়া কিং খান কনসার্ট।

গত কয়েকদিন ধরে চলা শাহরুখ খানের কনসার্টের খবরে কান, চোখ বিরক্ত হলেও একটা আগ্রহবোধ আমার মধ্যে কাজ করছিল। শাহরুখ বাইরের দেশে কনসার্টে যা করে তা কি এখানেও করবে ? সেটা জানার কৌতুহল এবং কিঞ্চিৎ হলেও অনুষ্ঠান কেমন হয় তা দেখার আগ্রহে বৈশাখী টিভির সামনে বসি। আমি ভারতের অন্যান্য অ্যাওয়ার্ড শো দেখেছি (অবশ্যই টিভিতে), তাই তারা (রানী, ইশা, অর্জুন) কেমন পারফর্ম করবে তা অজানা ছিল না। অনুষ্ঠান শুরু করতে দেরী হওয়া, কুমার বিশ্বজিৎ ও শাকিব খানের অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়া ছিল প্রত্যাশিত। এদেশে ঠিক সময়ে যে কিছুই হয় না। একসময় অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং নাচ শুরু করেন শেফালি জারিওয়ালা। এই মেয়ে কিছু বছর আগে 'কাঁটা লাগা' নামক হিন্দী মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে মিডিয়ায় আসে। বলে রাখি সেসময় আমি নিয়মিত হিন্দী মুভি, মিউজিক ভিডিও দেখতাম। এরপর এই মেয়ে আর কি করেছে জানি না। শেফালির পোষাকে অশালীন কিছু পাইনি, যদিও অনেকে হয়তো সুড়সুড়ি অনুভব করতে পারেন। অবাক কান্ড হলো ম্যালাইকা অরোরা খানের মূল গান 'মুন্নি বদনাম'-এও অশালীনতা খুঁজে পাইনি। এরপর একে একে এলো ইশা কোপিকার, অর্জুন রামপাল, রানী মুখার্জি। তারা অন্যান্য শো-তে যা করে এখানেও তাই করলো। রানীর পোষাকতো আরেকটি শো-তে করা তার পারফর্ম্যান্সের পোষাক। রানীর মুখে বাংলা শুনে আগত অনেক দর্শক বিমোহিত হয়ে গেল। লক্ষ্য করলাম তার বাংলায় কিছুটা আড়ষ্টতা, হয়তো হিন্দীময় পরিবেশে থাকার কুফল। এরপর দেবাশীষ বিশ্বাস শুরু করলেন শাহরুখ বন্দনা। মানুষের অষ্টম ধর্মের নাম নাকি শাহরুখ খান (!!!)। তিনি মঞ্চ কাঁপাতে আসছেন, দেবাশীষ তাকে দেখেছেন এবং নিজে ধন্য হয়েছেন। এখন দর্শকও তাকে দেখে ধন্য হবেন। এলেন শাহরুখ, নাচলেন তার হিট গানে। উন্মত্ত দর্শক নাচলেন, শাহরুখে সাথে থাকা স্বল্পবসনা নৃত্য শিল্পীদের দেখে চোখ জুড়ালেন। আর আমি বিব্রত বোধ করলাম টিভির সামনে বসেই। এরপর বোম্বে ভাইকিংস খ্যাত নীরাজ শ্রীধর কিছু হিন্দী গান গাইলেন। সময় কাটানো আর কি, সাথে ছিল লাল রঙের প্যান্ট পরিহিত নীরাজের লঙ্ফ-ঝম্ফ। মন্দ হয়নি দর্শককে বাঁদর নাচানো। এরপর আবার শাহরুখ এবং আমার গল্পেরও শুরু এখানে।

শাহরুখ সচরাচর যা করেন, অর্থাৎ দর্শককে মঞ্চে ডাকেন মজা করার জন্য। এখানেও তাই করলেন। এক যুগলকে ডাকলেন রোমান্সের গুরু রোমান্স শেখাবেন বলে। খুশিতে গদগদ হয়ে যুগল মঞ্চে উঠলেন, বিশেষ করে রমণীর খুশি যেন বাঁধ ভাঙছিল। শাহরুখ বলে কথা। মঞ্চে শাহরুখ তাদের ভালোবাসা শেখালেন, মেয়েটিকে চুমো খেলেন (ছেলেটিও বাদ থাকবে কেন ?)। কিছু ফান করে ছেড়ে দেয়ার আগে আবদার জানালেন অনেকগুলো বাচ্চা জন্ম দেয়ার; তার নাইট রাইডার যে মেয়েদের মতো খেলছে, তাদের জন্য কিছু খেলোয়াড় দরকার! মেয়েটিও খুশিতে আত্মহারা এসবে। খান সাহেব শালা বলেও গালিগালাজ করলেন তাদের, যা সে ছেলেটি শিখিয়ে দিয়েছিল। দেখলাম, আরেকবার বিব্রত হলাম।

এরপর এলো আরো দুই জন। একজন হিন্দী, বাংলা ছাড়া কিছুই জানেন না। অন্যজন আবার এক ধাপ উপরে, তিনি বাংলা ভালো জানলেও ইংরেজীতে সমস্যা এবং হিন্দী ঘৃণা করেন। তিনি আবার শাহরুখের জন্য আনা বোতল থেকে পানিও খেলেন, শাহরুখকে হিরু হিরু বলে জানালেন শাহরুখের বাংলা জানা জরুরী। শাহরুখ ভদ্রলোকের অবস্থা বুঝে বৌয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এবার যিনি এলেন তার ইংরেজী আরো করুণ। এক রাশিয়ান তরুণীকে নিয়ে পর্বে তিনি যে বাক্য ছাড়লেন তা দেখে যে কেউ লজ্জা পাবে। আমি তার কথায় যতোটা না লজ্জিত হয়েছি তার চেয়ে বেশী হয়েছি সে তরুণীর পোশাক দেখে। তার অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছিল এবং তা দেখানোর জন্যই কিনা সে একটা ভঙ্গিমা করলো। হায় বাঙালী, টাকা দিয়ে এসব দেখে। এদের পরের জন আবার স্বপ্ন দেখেছিল শাহরুখের সাথে সাক্ষাতের, তার স্বপ্ন সেদিন পূরণ হলো। সে আবার আব্দার করলো তার ভাইকে আনার জন্য। শাহরুখ তা এড়িয়ে গেল, তারপর নাচানাচি করার সময়ও ফিল্মে কাজ করার আব্দার। এবারও খান সাহেবের না। এরপর শাহরুখ বিশ্রাম নিয়ে আবার নাচানাচি করলেন সবাইকে (অন্যান্য সহশিল্পীদের) নিয়ে। তার বিশ্রামের সময় নীরাজ আবার এসেছিলেন এবং টুইস্ট গেয়ে বানর নাচ দেখিয়েছিলেন।

কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমরা কি দেখলাম ? বিনোদন, দুই ঘন্টার বিনোদন। যাতে ছিল কুরুচিকর অঙ্গভঙ্গি, ভাষার অপব্যবহার, অশালীন পোষাকের প্রদর্শনী। কোটি টাকা দিয়ে আমরা এই কিনলাম ? আবার অনেকে হাজার টাকা এমনকি লাখ টাকা খরচ করে হলেও শাহরুখের কনসার্টে গিয়েছেন। টিভি পর্দায় একজন উৎসুক অভিনেত্রীকে শাহরুখের সাথে নাচানাচি করার আকুলতা দেখেছি, দেখেছি সমাজের গণ্যমান্য অনেককেই। যে মাসে আমাদের দেশ বিজয় অর্জন করলো সে মাসে আমরা বিজাতীয় সংস্কৃতি আমদানী করেছি। তাদের নাচন দেখে হাততালি দিয়েছি, হিন্দী গানের তালে মাথা দেহ সবই নাচিয়েছি। অকাতরে ঢেলে দিয়েছি হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পরে উপার্জিত টাকা, স্রেফ কয়েক মিনিটের নাচ-গান দেখার জন্য। আখেরে লাভ হলো কার ? যারা শাহরুখকে দেখলাম তাদের নাকি শাহরুখের ? মাত্র কয়েক ঘন্টার মূল্য যে এত কোটি টাকা তা কয়জন স্বপ্নে ভেবেছিল ? যার টাকা আছে সে খরচ করবেই, আমাদের কি। শুনেছি খান সাহেব নাকি দুই কোটি টাকা পেয়ে শো শেষে এক পরিবারের জন্মদিনের পার্টিতেও গিয়েছিলেন।

সেলুকাস সাহেবকে টানবো না, নিজেই দীর্ঘশ্বাস ফেলি আর বলি বাঙালির শিক্ষা হবে কবে ? শিক্ষার দরকার নাই, যাদের টিভিতে হিন্দী সিরিয়াল, গায়ে হিন্দী ছবির নায়িকার নামে পোষাক, নাম হিন্দী ছবির নায়কের নামে তাদের কাছ থেকে আর কীইবা প্রত্যাশা করা যায় ? সময়ের অপচয় করলাম, আমার সময় অনুষ্ঠান দেখে, আপনার সময় এ লেখা পড়িয়ে।

দু:খিত।

6 মন্তব্য(গুলি):

tusin বলেছেন... Best Blogger Tips

ভাল লাগল লেখাটি পড়ে......

তারেক বলেছেন... Best Blogger Tips

ধন্যবাদ

অনন্ত অস্থির চোখে বেদনার মেঘ জমে আছে... বলেছেন... Best Blogger Tips

প্রথমে কিছুক্ষন দেখার পর আর মনে হয়নি দেখি। যদিও আমি শাহরুখ খান কে অনেক পছন্দ করি একজন অভিনেতা হিসেবে। তারপরও আমি আয়োজকদেরই গালি দিব সব কিছুর জন্য। শাহরুখ কে নিয়ে বাড়াবাড়িটা তারাই করেছে। আশা করি টিকেটের দাম এর পরের বার একটু হলেও কম হবে এবং আমি যেতে পারব।

মেঘ রোদ্দুর বলেছেন... Best Blogger Tips

লেখাটা ভালই লাগলো.....
আমার মতামতটাও দেখতে পারেন.....
http://shuvo006.wordpress.com/2010/12/12/shahrukh/

তারেক বলেছেন... Best Blogger Tips

দেখলাম, মন্তব্যও করলাম।

তারেক বলেছেন... Best Blogger Tips

শুধু টিকেটের দাম নয়, পুরো অনুষ্ঠানেই নাকি ছিল বিশৃঙ্খলা। যে দাম দিয়ে টিকেট কিনেছে মানুষ, সে সম্মান তারা পায়নি।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Like us on Facebook