Ads 468x60px

সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১১

বাঙালীর শখ

শখের মূল্য বাঙালীর কাছে অনেক বেশী, হয়তো অন্য জাতীর কাছেও। বাঙালী ছাড়া আর কোন জাতের মানুষ কাছ থেকে দেখিনি বলে ঠিক কথা বলতে পারছিনা, আমার চোখে তাই বাঙালের শখটাই চোখে পড়লো। নিজেকে দিয়েই শুরু করি। ডেস্কটপ কম্পিউটার থাকা সত্ত্বেও ল্যাপটপ কিনেছিলাম শখ ছিলো বলে। স্বস্তা মোবাইল ফোন থাকার পরেও দামী সেট ব্যবহারের শখ ছাড়তে পারিনি বলে নোকিয়া শো-রুমে কিছু টাকা অপচয় করে এসেছি। শখে পড়ে বাংলায় লিখছি, আপাত দৃষ্টিতে এটির খরচ চোখে না পড়লেও আসলে সময়, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইড্থ অপচয় হচ্ছে। শখ আছে বলেই না বিলাস দ্রব্যের বিক্রি হচ্ছে দেশজুড়ে। আবার শখে পড়ে বাংলার তরুণ-তরুণীরা মিডিয়ায় এসে অন্য লোকের শখের কারণ হয়ে যাচ্ছে। ছেলেবেলায় জীববিজ্ঞানে পড়া বাস্তু-সংস্থানের সাথে এটির মিল আছে কিনা কে জানে, থাকলেও থাকতে পারে। আমরা বই পড়ার শখ থাকলেও বই মেলা ছাড়া সেটা স্বীকার করি না। সারা বছর হিন্দী সিনেমা, সিরিয়াল দেখে অবসর পার করি আর বই মেলা এলে খাঁটি বাঙালী সাজি। এসবই নিজেকে অন্যরকমভাবে জাহির করার শখ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় মা-বাবার শখ যতোটা কাজ করে শিক্ষার্থীর শখ যেন ততোটাই অদৃশ্য। বাপ-মা কি পড়ালেখা করবে না সন্তান ? মেডিক্যালে পড়ার আগ্রহই যদি না থাকে তবে সেখানে পড়িয়ে কি হবে ? এরচেয়ে তাকে তার ইচ্ছামতো ফ্যাশন ডিজাইনার হতে দিলে তার মনের বিকাশ ঠিকমতো ঘটতো ! এরকম অংকে পারদর্শী ছেলেকে বিবিএ পড়িয়ে তথাকথিত শিক্ষিত বানিয়ে কি লাভ হয় তা আমি বুঝি না। ঐ যে, ছেলে পাশ করলে বাপ-মা বলতে পারবে, “আমার ছেলে ডাক্তার, কতো রুগী আসে তার কাছে !” আসল কথাই হয়তো এড়িয়ে যান তারা, শখ ছিল ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন। তাই হয়েছে। সবার শখ হয়তো পূরণ হয় না, যাদের হয় তাদের কথাই বলছি। চিড়িয়াখানায় জীব-জন্তু দেখাটাও শখ, ইট-সিমেন্টের শহরে একটা পাখির ডাক শুনতে পাওয়াই যেখানে ভাগ্য সেখানে চিড়িয়াখানা আছে বলে রক্ষা। আবার ভিনদেশ থেকে নর্তক-নর্তকী এলে তাদের দেখাটাও শখ। টিকিটের দাম যাই হোক, তাদের দেখতে হবেই। তারাও জন্তু নাকি ? শখ বলে কথা।

 

এমনই এক শখ খেলা দেখা, দেশের মাটিতে হওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেট। বেঁচে থাকতে দেশের মাটিতে আর কোন বিশ্বকাপ দেখা হবে কিনা সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। তাই বাঙালীর এমন চেষ্টা। পুলিশের লাঠির বাড়ি, বিশেষ মহলের হুমকি-ধামকি কিছুই থামাতে পারছেনা খেলা পাগল মানুষগুলোকে। তারা টিকেট কিনেই ছাড়বে। আমার নিজেরও যে ইচ্ছে ছিল তা নয়, কিন্তু এই গোলমালে যেয়ে টিকেট না কিনে ঘরে বসে আরামসে খেলা দেখাই আমার কাছে সহজ মনে হচ্ছে। টিকেট আমাদের মতো লোকের জন্য নয়, যাদের ক্ষমতা আছে তাদের জন্য। আমরা এখানে বহিরাগত। তা বেশ, এরচেয়ে বাংলাদেশের সাফল্যই বেশী কাম্য। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ দেখতে না পারার দু:খ ভুলতে পারব দলের সাফল্যে। একসময় শখের বসে খেলা খেলাটাই এখন আমাদের মান-সম্মানের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানেও সেই শখ। ম্যালা কথা বলে ফেলেছি, কেউ যদি ভুল করে এই লেখা পড়তে যান তাহলে নষ্ট হওয়া সময়ের জন্য মাফ চাই। নাম করা কলামিস্টের লেখা পড়লেও শিক্ষনীয় না হোক বিনোদিত হওয়া যেত, আর আমি কে ? আপন মনে বকবক করা এক শখের লেখক !

 

2 মন্তব্য(গুলি):

তৌফিক হাসান বলেছেন... Best Blogger Tips

বেশ লাগল।

আমার মনে হয়, শখটা জাতিগত কিছু কিনা। আমার কেন জানি মনে হয় শখ হল একান্ত ব্যাক্তিগত। আমেরিকায় থাকায় আমেরিকান, চাইনিজ, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইন্ডিয়ান নেপালি সহ কত জাতির মানুষ যে দেখলাম।

আমার পাশের ফ্ল্যাটের নেপালির শখ হইল রান্না করা। আমার শখ ছবি তোলা। ইন্ডিয়ান এক বন্ধু সময় পাইলেই আমেরিকান ফুটবল আর বাস্কেটবল দেখা।

শখ আসলে আমাদের ব্যাস্ত জীবনে ছুটে চলার মাঝে এক পশলা ভাললাগার অনুভূতি।

তারেক বলেছেন... Best Blogger Tips

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ তৌফিক ভাই।

আমার মনে হয় আমাদের শখগুলোর সামঞ্জস্যতা রয়েছে। সেটা যদি হয় কোন উৎসব কেন্দ্রীক। আর ব্যক্তিগত শখের মাঝেও কিন্তু মিল পাওয়া যায় জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে। তবে শেষ পর্যন্ত মনের খোরাকটাই বড়, অর্থ-সময়-স্থান সব গৌণ হয়ে যায় মানসিক তৃপ্তিতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Like us on Facebook