আমি ফটোগ্রাফির ক-ও জানিনা। একটা পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা আছে (Canon IXUS 100 IS) যেটা দিয়ে অতো কিছু না ভেবে ছবি তুলি। তবে ইদানিং সময়ে নতুন শখ হয়েছে ভালো ছবি তোলার। এজন্য দরকার পড়াশোনা, যেটা করার ধৈর্য কোনকালেই আমার ছিলো না। এখনও নেই, আরেকটা সমস্যা হলো শর্ট টার্ম মেমরি। আজকে কিছু পড়লে কয়দিন পরে সেটা মনে থাকে না। তাই মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। ফটোগ্রাফি নিয়ে যা পড়ছি তা লিখে রাখলে কেমন হয় ? অন্তত নিজের মতো করে ? তাই এ লেখার অবতারনা। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ প্রজন্ম ফোরামের শুভ ভাই, সামু ব্লগের ফয়সাল আকরাম ভাই, যাদের লেখা পড়ে ফটোগ্রফির অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আর কৃতজ্ঞ রাসেল জন ভাইয়ের প্রতি যার ফ্লিকার একাউন্টে থাকা মনোমুগ্ধকর ছবিগুলো আমার মনের সুপ্ত বাসনা আবার জাগিয়ে তুলেছে। বকবক না করে কাজের কথায় আসি।
প্রথম পাঠ: অ্যাপার্চার (Aperture)
ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলতে গেলে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে যার একটি হলো অ্যাপার্চার। অ্যাপার্চারের মান দিয়ে বোঝা যায় কতটুকু আলো সেন্সরে প্রবেশ করবে বা করলো। এটি হচ্ছে লেন্সের ডায়ামিটার বা পরিধি যা নিয়ন্ত্রণ করে আইরিস। অ্যাপার্চার বেশী হলে সেন্সরে প্রবেশকৃত আলোও বেশী হবে। অ্যাপার্চারের মান প্রকাশ করা হয় F-stop দিয়ে। মান বেশী হলে বুঝতে হবে কম আলো প্রবেশ করবে আবার মান কম হলে বেশী আলো প্রবেশ করবে। যেমন F2.8 বা f/2.8 এরচেয়ে কম আলো প্রবেশ করবে f/22 তে। ব্যপারটা উল্টো মনে হলেও ম্যানুয়ালি ছবি তুলতে গেলে এটা মনে রাখতে হবে। এখনকার অনেক ক্যামেরার ম্যানুয়ালে বলা থাকে অ্যাপার্চার ভ্যালু কত। সাধারণত F2.0-F8.0 টাইপের লেখা থাকে। এতে বুঝতে হবে এই ক্যামেরার সর্বোচ্চ অ্যাপার্চার F2.0 এবং সর্বনিম্ন ভ্যালু F8.0। অ্যাপার্চার যতো বেশী হবে কম আলোয় ছবি তোলা ততো সহজ হবে। কারন অল্প আলোয় অ্যাপার্চার বড়িয়ে আপনি সেন্সরে বেশী আলো প্রবেশ করাচ্ছেন। কম অ্যাপার্চার ভ্যালুতে শাটার স্পিড কম হবে আবার অ্যাপার্চার ভ্যালু বাড়লে শাটার স্পিডও বাড়বে। একটা কথা মনে রাখবেন অ্যাপার্চার কমালে ছবির শার্পনেস বেড়ে যাবে। এ নিয়ে এখন আর কথা বাড়াবো না। অ্যাপার্চারের বেসিক বলা হয়ে গেছে। এবার চলুন পরের পাঠে।
দ্বিতীয় পাঠ: শাটার স্পিড
শাটার স্পিড হচ্ছে সে সময় যে সময় পর্যন্ত আপনার শাটার খোলা থাকবে। অর্থাৎ লেন্সে আলো প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে শাটার দিয়ে। অ্যাপার্চারের সাথে এর সম্পর্ক আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়। অ্যাপার্চার ভ্যালু নিয়ন্ত্রণ করে আলো কম-বেশী করলেন। সে আলো যে সময়টুকু থাকবে সেটিই শাটার স্পিড। শাটার স্পিড মাপা হয় সেকেন্ডে, যেমন 1/1000 sec, 1/60 sec, 1/30 sec ইত্যাদি। ডিনমিনেটর (উদাহরণে 1000, 60, 30) যতো বেশী হবে শাটার স্পিডও ততো বাড়বে। আপনি যদি বেশী শাটার স্পিডে ছবি তুলতে চান তাহলে অ্যাপার্চার বাড়াতে হবে। যেমন F1.8 অ্যাপার্চারের জন্য শাটার স্পিড 1/250 sec হওয়া উচিৎ।
তৃতীয় পাঠ: আইএসও (ISO)
আইএসও বলতে বুঝতে হবে সেন্সরের সেনসিটিভিটি কত। কম মান যেমন ১০০ হলে কম আলোক সংবেদনশীল, ৪০০ হলে বেশী আলোক সংবেদনশীল। মান বেশী হলে আবার ছবিতে নয়েজ বা গ্রেইন চলে আসবে। অল্প আলোয় ছবি তোলার সময় আইএসও বাড়িয়ে নিতে হয়। যেমন মোমবাতির আলোয় কোন অনুষ্ঠানের ছবিতে আইএসও বাড়াতে হবে, পাশাপাশি অ্যাপার্চারও বাড়াতে হবে (আসলে মান কমবে যেমন F1.8) আর শাটার স্পিড কম-বেশী করতে পারেন প্রয়োজন অনুযায়ী। আবার দিনের আলোয় আইএসও কমিয়ে (যেমন ১০০) ছবি তুললেই হবে, কারন যথেষ্ট আলো সাবজেক্টে পড়ছে।
এই তিনটি বিষয়কে নিয়ে যে ধারনা তার নাম এক্সপোজার। এক্সপোজার মানে হচ্ছে সেন্সরের উপর আলো পড়া। এক্সপোজারকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় অ্যাপার্চার, শাটার স্পিড ও আইএসও দিয়ে। ওভার এক্সপোজ মানে ছবিতে শাদার (আলো) পরিমাণ বেশী, আন্ডার এক্সপোজ মানে প্রয়োজনীয় আলো ছবিতে আসেনি (ছবি অন্ধকার দেখাবে)।
অনেক বলে ফেলেছি। সামনে আরো কিছু লিখব। সে পর্যন্ত যা জানলেন তা নিয়ে পড়াশোনা করুন, ফটোগ্রাফি ভালো না বেসে পারবেন না। সৃষ্টিতেই তো আনন্দ, তাই না ?
সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১০
ফটোগ্রাফি : শুরু করার পূর্বে
এর দ্বারা পোস্ট করা
Unknown
এই সময়ে
১০:২১ PM
এটি ইমেল করুন
এটি ব্লগ করুন!
X-এ শেয়ার করুন
Facebook-এ শেয়ার করুন
লেবেলসমূহ:
অ্যাপার্চার,
আইএসও,
ইক্সাস,
এক্সপোজার,
ক্যানন,
ছবি,
ফটোগ্রাফি,
শাটার স্পিড
3 মন্তব্য(গুলি):
বেশ ভালোই লিখেছেন......
পারলে মিটারিং নিয়ে কিছু লেখেন..... এই জিইসটা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না.....
দারুন লেখা। আমার একটি Minolta ক্যামেরা আছে বহু পুরোনো। সেইটা দিয়েই ম্যানুয়ালী ফটো তুলি। সামনে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার ইচ্ছা রাখি। আপনার পোষ্ট পড়ে মনে হচ্ছে সেটা তাড়াতাড়ি কিনতে হবে।
ছবি তোলার নেশা পেলে কিনে ফেলতে হবে, কিনলে ডিএসএলআর কিনুন। এক ঢিলে দুই পাখি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন