ঈদের
ছুটি ভালই কাটছে। মুভি দেখছি,
নামাচ্ছি,
টুইটারে টুইট
করছি, মাঝে
মাঝে ফেবুতে ঢুঁ মারছি। লেখালেখি
বড্ড কম হয়ে যাচ্ছে। যা লিখছি
তাও আবার লিনাক্স নিয়ে। কাঁহাতক
সহ্য করা যায় এইসব টেকি
প্যানপ্যানানি। তাই সাবজেক্ট
পাল্টানোর চেষ্টা করছি। মুভি
রিভিউ লিখার ব্যর্থ চেষ্টা।
সবাই তো লিখছে, আমিও
নাহয় এই ফাঁকে কয়েকটা রিভিউ
লিখে ফেলি। যা দেখি তার লিখলে
তো হবে না, যেগুলো
ভাল লাগে সেগুলোর লিখতে হবে।
সেই ধারাবাহিকতায় আজ লিখছি
বলিউডের ছবি “কাহানী” নিয়ে।
কাহানী
ছবিটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনা
করেছেন সুজয় ঘোষ। মুক্তি
পেয়েছে ২০১২ সালের মার্চ মাসে।
প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার বাজেটের
ছবিটি বক্স অফিস থেকে আয় করেছে
প্রায় কুড়ি মিলিয়ন ডলার।
ব্যবসাসফল ছবি বলতেই হয়। ছবির
কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়
করেছেন ডার্টি পিকচার,
পরীনিতা
খ্যাত বিদ্যা বালান,
কলকাতার
পরিচিত মুখ পরমব্রত চক্রবর্তী,
নওয়াজুদ্দীন
সিদ্দিকী, ইন্দ্রনীল
সেনগুপ্ত প্রমুখ।
ছবির
শুরুতে দেখা যায় ব্যস্ত শহর
কলকাতার মেট্র রেল কম্পার্টমেন্টে
বিষাক্ত গ্যাস আক্রমণ হয় যাতে
মারা যায় অনেক যাত্রী। আসল
গল্প শুরু হয় তার দুই বছর পরে।
কলকাতায় হাজির হয় এক লন্ডন
প্রবাসী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
বিদ্যা বাগচী (বিদ্যা
বালান), যে
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় খুঁজতে
এসেছে তার হারানো স্বামীকে।
যার নাম অর্ণব বাগচী,
যিনি কাজ
করতেন ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারে
(NDC)।
বিদ্যাকে সহায়তা করতে এগিয়ে
আসে তরুণ পুলিশ অফিসার রানা
সিনহা (পরমব্রত
চক্রবর্তী)।
দেখা যায় অর্ণব নামে কেউ
এনডিসিতে কাজ করেনি,
কিংবা যে
হোটেলের কথা বিদ্যা বলছিল সে
হোটেলও ওঠেনি সে নামের কেউ।
বিদ্যার দৃঢ় বিশ্বাস অর্ণব
বাগচী এখানে এসেছিল। রানার
সহায়তায় বিদ্যা সম্ভাব্য সব
জায়গায় খুঁজতে শুরু করে অর্ণবকে।
বিদ্যার এ কাজে বাধা হিসেবে
আসে পেশাদার খুনী বব (শ্বাশ্বত
চ্যাটার্জী)।
ববের চোখ ফাঁকি দিয়ে,
এনডিসির টপ
লেভেলের বাধা উপেক্ষা করে
বিদ্যা নিজের মত করে খুঁজতে
থাকে অর্ণবকে, রানাও
তাকে সহায়তা করে যথেষ্ট। এবার
হাজির হয় আইবি কর্মকর্তা খান।
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে
আসে সাপ। জানা যায় অর্ণবের
মতো দেখতে মিলন বাগচী (ইন্দ্রনীল
সেনগুপ্ত) নামের
একজন এনডিসিতে কাজ করতো,
যে কিনা জড়িত
ছিল দুই বছর পূর্বের সেই
সন্ত্রাসী হামলার সাথে। তার
তথ্য পেলে অর্ণবকে খুঁজে পাওয়া
সম্ভব হবে। খান শুরুতে বিদ্যাকে
না করলেও বিদ্যার একাগ্রতার
কাছে হার মেনে তাকে সহায়তা
করতে রাজি হয়। দূর্গা পূজার
উৎসবময় নগরীতে এনডিসির শীর্ষ
স্থানীয় এক কর্মকর্তার সন্ত্রাসী
গ্রুপের সাথে সম্পর্কের তথ্য
বের করে ফেলে বিদ্যা। জনবহুল
শহরে দুর্ঘটনাক্রমে খুন হয়ে
যায় সে কর্মকর্তা, খানের
শেষ ক্লু নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যা
দমে যায় না, সে
এগিয়ে যায়। দূর্গা পূজার
প্রতিমা বিসর্জনের দিন মিলন
বাগচী দেখা করতে চায় বিদ্যার
সাথে। বিদ্যা পুলিশকে না
জানিয়ে দেখা করতে যায় মিলনের
সাথে, আশা
তার স্বামীকে পাওয়া যাবে।
এখানেই
বেরিয়ে আসে সত্য। বিদ্যার
হাতে খুন হয় মিলন বাগচী,
বিদ্যার
স্বামী অরূপ বসু দুই বছর আগের
গ্যাস হামলায় মৃত্যুবরণ
করেছিল। তখন বিদ্যার পেটে
থাকা বাচ্চাও নষ্ট হয়ে যায়।
সেই বিদ্যা মিলন দামজীকে
খুঁজতে এসেছিল, ফাঁদ
পেতেছিল পুলিশকে বোকা বানিয়ে।
আইবি অফিসার খান বোকা বনে যায়,
রানা সব বুঝতে
পারে। বিদ্যাও অদৃশ্য হয়ে
যায় লাল পাড়ের সাদা শাড়ী পরা
অসংখ্য রমণীর ভিড়ে ব্যস্ত
শহর কলকাতায় দূর্গা পূজার
রাতে।
বলিউডের
ছবি মানে একই ফর্মূলা,
নাচ-গান-মারামারি।
সে হিসাবে কাহানী ব্যতিক্রম।
ছবিতে মাসালাদার কোন গান নেই,
নেই কোন মারমার
কাটকাট একশান। আছে দূর্দান্ত
অভিনয়, প্লট
ও টুইস্ট। একই ধাঁচের বলিউডি
ছবি দেখে দেখে যারা বিরক্ত
তার ভিন্ন ধাঁচের ছবিটি দেখে
আনন্দ পাবেন নিশ্চয়ই। গর্ভবতী
মহিলার চরিত্রে বিদ্যা বালান
অসাধারন অভিনয় করেছেন। পরমব্রতও
ভাল করেছে, অন্যান্য
কাস্টিংও ভাল ছিল। খান চরিতে
নওয়াজুদ্দীন সিদ্দীকি ছিলেন
সাবলীল। বব বিশ্বাসরূপী
কলকাতার শক্তিমান অভিনেতা
প্রয়াত শুভেন্দু চ্যাটার্জীর
ছেলে শ্বাশ্বত চ্যাটার্জী
দারুণ মানিয়েছেন। অনেকদিন
পর কোন বলিউডি মুভি দেখে ভাল
লাগল। শোনা যায় বিদ্যাকে ভেবেই
নাকি ছবির গল্প সাজিয়েছিলেন
নাট্যকার। তিনি সফল,
বিদ্যার
ক্যারিয়ারে আরেকটি হিট জমা
হলো। সমালোচকদের কাছেও যথেষ্ট
প্রশংসা পেয়েছে কাহানী। বিদ্যা
যে ন্য়াশনাল এওয়ার্ড পাওয়ার
দিকে এগিয়ে গেলেন তা বলার
অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি
ফুজি ফিল্ম এওয়ার্ড জিতেছে
কাহানী। আইএমডিবিতে রেটিং
পেয়েছে আট দশমিক দুই,
বলিউড হাঙ্গামার
রেটিং চার, টাইমস
অব ইন্ডিয়ার রেটিং সাড়ে চার,
রোটেন টম্যাটোর
দর্শক জরিপে একানব্বই শতাংশ
রেটিং পেয়েছে কাহানী।
বিদ্যা
বালানও ছবির প্রচারণায় তার
বিদ্যা বাগচী ক্যারেক্টারকে
বেছে নিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন
শপিং মলে, সিনেমা
হলে, রেস্তোরায়
বিদ্যা বাগচী সেজে প্রচারণা
চালিয়েছেন। বিদ্যা যে শতভাগ
সফল বলা যায়।
সুজয়
ঘোষ তো পরিকল্পনা আঁটছেন
বিদ্যা বাগচীকে নিয়ে তিনি
সিরিজ করবেন, সত্যজিৎ
রায়ের ফেলুদা তার অনুপ্রেরণা।
সাউথ ইন্ডিয়ায় ছবিটির রিমেক
হচ্ছে, আগামী
বছর জানুয়ারিতে মুক্তি পেতে
পারে। আর কাহানী-২'র
স্ক্রিপ্টের কাজ এগিয়ে চলেছে,
আগামী বছরই
মুক্তি পেতে পারে কাহানী-২।
তো
আর দেরী কেন, দেখতে
বসে যান বিদ্যা বালানের
“কাহানী”।