বাংলাদেশ গতকাল রাতে মিরপুর শেরে-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্নায়ুক্ষয়ী এক ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে হারালো। ব্যবধান মাত্র ২৭ রান। মনে হতে পারে সমশক্তির দুই দলের লড়াই হয়েছে। আসলে কি তাই ? অসম শক্তির পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকাকে হারানোর সময় ব্যবধানটা এত বিশাল ছিল যে মনে হতেই পারে বাংলাদেশের সাথে তাদের পার্থক্য অনেক। আসলে ব্যপারটা উল্টো। হারার ব্যবধান দিয়ে দুই দলের শক্তিমত্তার বিচার করা যায় না। তাই গতকালের ম্যাচও তা প্রকাশ করছে না। এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচের মোকাবিলায় দুটিতেই কিন্তু আয়ারল্যান্ড জিতেছে। পাঁচটি বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপে চমকে দেয়া বাংলাদেশ আর এবারের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। গতবার দলে সুমন, রফিকদের মতো অভিজ্ঞদের মাঝেও উইকেটকিপার পাইলটের জন্য ছিল হাহাকার। তখনকার পিচ্চি মুশফিক আজো উইকেটের পেছনে পাইলটের সমকক্ষ হতে পারেনি। এবারের দলটা দেখুন, বিশ্বকাপ খেলা আশরাফুল, সাকিব, তামিম, নাফিস, রাজ্জাক ও মুশফিকের সাথে একদল তরুণ। হোক তারা তরুণ কিন্তু ম্যাচ খেলে খেলে অনেক কিছুই জানা হয়ে গেছে তাদের। তাই একদম অনভিজ্ঞ বলা চলে না দলটাকে। তার প্রমাণ আরো একবার দেখলাম গতকাল।
টস নিয়ে সমালোচনা প্রায় সময়ই ক্রিকেট দলপতিদের শুনতে হয়। বিশেষ করে দল যখন হারে তখন। ভারতের কাছে প্রথম ম্যাচে ব্যাট না করে ফিল্ডিং নেয়ায় যথেষ্ট সমালোচনা শুনতে হয় আমাদের দলনায়ক সাকিবকে। আরে ভাই সে যেটা ভালো মনে করেছে সেটা করেছে, আমরা দর্শকরা সমালোচনা করে নিজের মত দিতে পারি কখনোই সাকিবকে আহত করে এমন কথা বলতে পারি না। কিন্তু মিডিয়া দেখলাম তা করতেই উৎসাহ। কালকে টস জিতে ব্যাট করে ২০৫ রানে অল-আউট হয়ে যাবার পর সাকিবকে কলমের খোঁচায় বিদ্ধ করার জন্য অনেকেই হয়তো প্রস্তুতি নিয়ে ফেলছিলেন। আল্লাহর রহমত, ম্যাচ হারতে হয়নি। তাহলে যে অনেক কিছুই ওলট-পালট হয়ে যেত! ২০৫ রান করে অস্ট্রেলিয়াও হয়তো জয়ের চিন্তা করতে কয়েকবার ভাববে। তাছাড়া বল দ্বিতীয় অর্ধে সহজেই ব্যাটে আসছিল। ঐ যে বিশ্বাস, যেটা ছিল আমাদের তরুণ ছেলেগুলোর বুকে। দর্শকরা দিয়ে গেছে অদম্য উৎসাহ। তাতে করে এ রান তাড়া করে জিতে কোন দলের সাধ্য। তা হয়ওনি। আয়ারল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১৭৮ রানে। তাদেরকে হারানোর জন্য তৈরী করা স্পিন ফাঁদে পেসাররাই চমক দেখিয়েছে। শফিউলের তৃতীয় স্পেল (৬-১-১০-৪) যা চমক দেখাল তাতে ম্যাচ জিতেই নিল বাংলাদেশ। এনিয়ে শফিউল ইসলাম সুহাস দ্বিতীয়বার আইরিশদের সাথে ৪ উইকেট পেল। এ জয় আরো অনায়াস কেন হয়নি তা নিয়ে প্রথমে আমার মনে কিঞ্চিৎ আক্ষেপ ছিল। পরে ভেবে দেখলাম সহজ জয় হলে কি এমন আনন্দ পেতাম ? কঠিন ম্যাচ জিতলে অভিজ্ঞতার ভান্ডার যতোটা পূর্ণ হয় সহজ ম্যাচে যে তা হয় না, তাই এমন ম্যাচই দলকে দেবে আত্মবিশ্বাস। কঠিনকে জয় করার প্রেরণা। মনে পড়ে ইংল্যান্ডকে ৫ রানে, নিউজিল্যান্ডকে ৩ রানে হারিয়ে ক্লোজ ম্যাচ জেতার অভ্যাস বাংলাদেশ আগেই করেছিল। কাল সেটাই আরেকবার করলো। সাবাস বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, নিকট ভবিষ্যতে এমন অনেক ম্যাচ তোমরা জিতবে এ দোয়া করি।
শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১১
স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ জয়েই যতো আনন্দ
এর দ্বারা পোস্ট করা
Unknown
এই সময়ে
৭:০৬ PM
এটি ইমেল করুন
এটি ব্লগ করুন!
X-এ শেয়ার করুন
Facebook-এ শেয়ার করুন
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন