
হয়ে গেল, শেষ পর্যন্ত শুরু হয়ে গেল দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেট। বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার শিল্পীদের চমৎকার পরিবেশনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি এককথায় ছিল অসাধারন। শুরু হয়েছিল বিসিবি সভাপতি কামাল সাহেবের বক্তৃতার মাধ্যমে। উনি ইংরেজীটা ভালো বললেও বাংলা অংশে এসে স্টেডিয়ামকে বানিয়ে দিলেন পল্টনের জনসভা। এরপর আমাদের খেলার প্রতি মন্ত্রী এলেন। তিনি দাঁত মুখ খিঁচে উচ্চস্বরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে গেলেন। একবার শুনলাম তিনি বলছেন টু জিরো জিরো ওয়ান ওয়ার্ল্ড কাপ (!)। হায়রে মন্ত্রী তিনি টু থাউজ্যান্ড ইলেভেন সালের কথাও বেমালুম ভুলে গেলেন, অবশ্য কিছুদিন আগে নাকি তিনি বলেছিলেন সম্রাট শাহজাহান লাল কেল্লা বানিয়েছেন বাইশ বছরের সাধনায়। ওনার কাছে ভালো কিছু আশাও করিনি। ভালো লেগেছে অর্থমন্ত্রীর কথা। অত্যন্ত সাবলীলভাবে তিনি বলে গেলেন। ঐ সময়টায় শেয়ার বাজার নিয়ে তার বিভিন্ন কটূ মন্তব্য ভুলে গেলাম। গর্বে বুকটা ভরে উঠলো। একজন স্মার্ট মন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম। আইসিসি প্রেসিডেন্ট শারদ পাওয়ার ভালোই বলেছেন। বাংলা বলে আমাদের ভাষার প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। তবে শেষে “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ” বলে অনেকের চোখে হয়তো ভিলেন হয়ে গেছেন পাওয়ার সাহেব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলায় ২০০১ সালের বিশ্বকাপ উদ্বোধনের কথাটা দৃষ্টিকটূ লেগেছে। ইংরেজীতে কি বললেন বুঝতে পারলামনা!
অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল দারুণ সব ফায়ারওয়ার্কস। প্রথমে এ প্রজন্মের কিছু শিল্পী একটা গান গাইলেন, তেমন একটা মন ছুঁতে পারেনি সেটা। তবে সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লাদের পরিবেশনা ছিল অত্যন্ত ভালো। এদের সাথে একই মঞ্চে মমতাজকে দেখে মনের কোথায় যেন খাপছাড়া ভাবটা জেগেছে। তবে শিল্প ব্যাংকের দেয়ালে খেলা ক্রিকেটে ছিল নতুনত্বের ছোঁয়া। এইডসের উপরে শেওয়াগ ও সাঙ্গাকারার করা প্রামাণ্যচিত্র ভালো ছিল। তবে এরচেয়েও দৃষ্টিনন্দন ছিল পর্যটন কর্পোরেশনের করা প্রামাণ্যচিত্র। ধন্যবাদ তারা পেতেই পারে। ভারতের শিল্পীদের পরিবেশনার চেয়ে ভালো লেগেছে শ্রীলঙ্কার পরিবেশনা। ভারতের নাচ-গান মনে হয়েছে সিনেমা নির্ভর। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, একাত্তর, উপজাতীয়দের জীবনচিত্র ইত্যাদি নিয়ে পরিবেশনা ছিল বেশ উপভোগ্য। তবে শেষদিকে কানাডিয়ান তারকা শিল্পী ব্রায়ান এডামসের পারফর্ম্যান্স পুরো অনুষ্ঠানকে দিয়েছে আন্তর্জাতিকতার চাদর। দারুণ গেয়েছেন এডামস তার দল নিয়ে। এরপর শঙ্কর-এহসান-লয়ের থিম সঙ পরিবেশনাও ছিল এককথায় অপূর্ব। শঙ্করের গলায় বাংলা শুনে মনে হয়নি তার মাতৃভাষা বাংলা নয়। তাদের গানের তালে তালে সন্ধ্যার আকাশ আগুনের রঙে রাঙিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
তবুও একটা কথা বলা হয়নি। বিশ্বকাপ মাস্কট স্টাম্পি ট্রলিতে চেপে মাঠে প্রবেশ করে। মূল মঞ্চে অংশগ্রহণকারী চৌদ্দ দলের অধিনায়কদের রিকশায় করে আসাটা ছিল ব্যতিক্রমি উদ্যোগ। সনু নিগাম তাদের দাঁড় করিয়ে গেয়েছিলেন যেটা ভালো লাগেনি আমার। এরচেয়ে ভালো ছিল ছায়ানটের শিল্পীদের গাওয়া সেই গান, যা জাগিয়ে তোলে দেশমায়ের প্রতি ভালোবাসা।
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।”
5 মন্তব্য(গুলি):
মমতাজের 'নান্টু ঘটক' টাইপের বাজারি গানগুলো কি বিশ্বকাপের মত আসরের উপযোগী?? এই কথাটি আয়োজকেরা কিভাবে ভুলে গেলেন? নাকি সরকার দলীয় মহিলা সাংসদ পরিচয়টাই মুখ্য হয়েছে? তবে গত কিছুদিন যাবত বিতর্কিত 'জেগে উঠো বাংলাদেশ' নামক নকল গানটি শুনতে হয়নি বলে রক্ষা।
+১ ফর ব্রায়ান এডামস আর প্রামাণ্যচিত্র
তবে বাজারী গানের মাঝেও ব্রায়ান অ্যাডামসের উপস্থাপনা অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি ঢেকে দিয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।
বাজারী মানুষ তো বাজারী টাইপের গানই গাবে। মমতাজ নিজেই একজন নীতিহীন মানুষ।
উনি ১৯৯৬ সালে মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেত্রী ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১-২০০৭ সাল পর্যন্ত জাসাস এর নেত্রী ছিলেন। খালেদা ম্যাডামের সাথে বিদেশে ভ্রমন করেছেন, ইয়াজুদ্দিনের সাথে জাসাসের হয়ে দেখা করেছেন, ঢাকা বিশ্ব ভার্সিটিতে টিএসসি তে তারেক চোরার সামনে "তারেক আমার ভাই, জিয়া আমার পিতা, জিয়া ছাড়া এই ভূবনে আমার কেহ নাইরে" গান গাইছে। এই গান সেই সময় বিএনপির অফিসেও নিয়মিত বাজানো হইত। এখন উনি আবার আওয়ামী এমপি। সারা জীবন এত দালালি করছে বিশ্বকাপে গান গাওয়া তার দালালীর পুরষ্কার।
এমন একজন বিতর্কিত মহিলাকে আওয়ামী দলে নিয়ে কি ভুল করলো? বিশ্বকাপের মত আসরের উদ্বোধনীতে মমতাজ মানের শিল্পী খুবই বেমানান, এরচেয়ে ইভা রহমান হলেও খারাপ হতো না :P
ইরতেজা ভাই তো অনেক পেছনের কথাই তুলে ধরলেন, যা অজানা ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে ব্লগে মন্তব্য করার জন্য।
অভি ভাই ইভা রহমানের গলায় তো সুরই নেই, তবে এখানে কুমার বিশ্বজিৎ, শুভ্রদেব বা এন্ড্রু কিশোরকে দিলে মানাত বলে মনে হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন